দপ্তরিদের ৩ বছরের উৎসব ভাতা না পাওয়া

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রবাদ আছে ‘পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়’। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মাঝে খারাপ চরিত্রের মানুষের সমাহার। বিভিন্ন কারণে তাদের মাঝে খারাপ চরিত্রের প্রভাব পড়েছে। এর অন্যতম কারণ পারিবারিক শিক্ষা ও বিদ্যালয়ে নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি।

এই ঘাটতির ফলে বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলুষিত হয়ে পড়েছে। পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা কুরুচিপূর্ণ দুর্নীতিপরায়ণ উশৃঙ্খল দপ্তরি, সহশিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির লোকজন ও কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড দেখে থাকি। কতিপয় খারাপ লোকজনের জন্য পুরো দপ্তরি, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও কর্মকর্তাদেরকে হেয় করা উচিত নয়। অপরাধ যে কেউ করুক সে অপরাধী।

ইদানিং তৃতীয় ধাপের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য আমরা প্রশ্নপত্র বিক্রেতাদের চিহ্নিত করেছি। সমস্বরে নিন্দা জানিয়েছি। একবার ভুলেও তাদের হাতে প্রশ্ন সরবরাহকারীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করার প্রয়োজন অনুভব করিনি। বড় কর্মকর্তা বলে তারা কি ধোয়া তুলসীপাতার মতো পবিত্র। পানি স্বাভাবিকভাবে নিচের দিকে গড়াবে। অপরাধ কেলেঙ্কারির দায়ভার কেনো নিচের দিকে গড়াবে। যতো দোষ প্রশ্ন বিক্রেতা বা শিক্ষক ও দপ্তরিদের। বড় মহাকর্মকর্তারা কি মহাপবিত্র?

মহাপরিচালকের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অনেকটা কানে তুলা দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তড়িঘড়ি করে ভাইভা পরীক্ষা নেয়ার তৎপরতা চালিয়েছেন। এতে মনে হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে ‘সরিষার মধ্যে বড়ো ভূত’ লুকায়িত আছে। মহামান্য হাইকোর্টে নির্দেশনা মোতাবেক প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের প্রধান ভূত বের হবে কি না জানি না? তবে প্রত্যাশা থাকবে আসল ভূত বের করে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হোক। বিগত মহাপরিচালকের সময়ে বদলিসহ প্রায় কাজেই ঘুষ দুর্নীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিমজ্জিত ছিলো বলে গুঞ্জন রয়েছে। প্রাথমিক দপ্তরি সমাজ দীর্ঘ ৩ বছর যাবত ঈদ বোনাস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। কতিপয় দপ্তরি গত ঈদ-উল ফিতরের আগেই সাবেক মহাপরিচালককে বিষয়টি অবহিত করলে, তিনি ঈদ-উল আজহার বোনাস প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেন। পরবর্তীতে দপ্তরিরা সমাজের নেতৃবৃন্দ মহাপরিচালকের সঙ্গে পরবর্তীতে সাক্ষাৎ করতে গেলে সুযোগ পাননি। তিনি পরবর্তী দিনগুলো অবসরের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্রায় সারা দেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পরিদর্শনে ব্যস্ত ছিলেন। জানা গেছে তিনি একদিনে রংপুর বিভাগে ২১টি প্রশিক্ষণে যেয়ে টিএ, ডিএ ছাড়া অর্ধলক্ষ টাকা সম্মানি গ্রহণ করেছেন। অবসরের আগে প্রাথমিক শিক্ষার অভিভাবক হিসেবে শুধু প্রশিক্ষণের কাজ মুখ্য হিসেবে দৃষ্টান্ত হিসেবে বেছে নেয়া কতোটা নৈতিক?

একই ছাদের নিচে অবস্থানরত প্রাথমিকের শিক্ষক ও দপ্তরি। শিক্ষকরা ঈদে উৎসব স্বাচ্ছন্দ্যে করবে। আর দপ্তরিদের দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ ঈদ উৎসব ভাতা না পেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার রহমত থেকে কেনো, কারা বঞ্চিত করলো জানি না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্ন বারবার কেনো ফাঁস হয়? ঘুষ-দুর্নীতি জিরো টলারেন্স কেনো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বাস্তবায়নে হয় না? একদিনে একাধিক প্রশিক্ষণে যেয়ে সম্মানী নেয়া কতোটা বৈধ? দুর্নীতি দমন বিভাগের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। 

দপ্তরিদের উৎসব ভাতা নিশ্চিত হোক। প্রাথমিকের সব দুর্নীতি জিরো টলারেন্সে নামিয়ে আনা হোক। এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিশুদের মেধা বিকাশে নতুন কারিকুলাম করা হচ্ছে - dainik shiksha শিশুদের মেধা বিকাশে নতুন কারিকুলাম করা হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছরের করার পরিকল্পনা চলছে: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছরের করার পরিকল্পনা চলছে: প্রধানমন্ত্রী ‘২০ লাখ টাকায় ডিসি এসি ল্যান্ডকে কিনেছি’ - dainik shiksha ‘২০ লাখ টাকায় ডিসি এসি ল্যান্ডকে কিনেছি’ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কেনো শিক্ষা ভবনে গেলেন - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কেনো শিক্ষা ভবনে গেলেন ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ বেনজীর আহমেদের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিলের প্রস্তাব - dainik shiksha বেনজীর আহমেদের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিলের প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025539398193359