এক দশকের বেশি সময় বগুড়ার ধুনটের বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (হিসাব সহকারী) জুলিয়া আকতার জুঁই। সরকারি এমপিওভুক্ত এই বিদ্যালয়ে চাকরি করলেও এক দিনের জন্য তিনি কর্মস্থলে পা মাড়াননি। তবে মাস গেলে ঠিকই বেতন তুলছেন।
বছরের পর বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারটি এলাকার সবারই জানা। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস কেউ কোনো দিন দেখায়নি। কারণ জুঁইয়ের স্বামী আলিম আল রাজী বুলেট ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা।
গত ৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বগুড়া জেলা প্রশাসক, ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে জুঁইয়ের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে অভিযোগ করেন অভিভাবক হাবিবর রহমান।
অভিযোগের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলিয়া আকতার জুঁই ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী-কাম হিসাব সহকারী পদে যোগ দেন। তার ইনডেক্স নম্বর ১০৬৯৪০১। তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর এক দিনও কর্মস্থলে যাননি। এখন থাকেন বগুড়া শহরের বৃন্দাবনপাড়ার ভাড়া বাসায়। কর্মস্থলে যেতে অনীহা থাকলেও দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সরকারি কোষাগার থেকে বেতন তুলছেন। বর্তমানে তার মাসিক বেতন ১২ হাজার ২০১ টাকা। বেতন ছাড়াও ঈদ-পার্বণে তুলছেন উৎসব ভাতা।
সরকারের এমপিওভুক্তি তালিকার তথ্য অনুসারে মাসিক অর্থছাড় বিবরণীতে জুলিয়া আকতার জুঁইকে সেই প্রতিষ্ঠানের একজন তৃতীয় শ্রেণির নিয়মিত কর্মী হিসেবে দেখানো হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ১১-০১৩৮৬৭-৩ নম্বর হিসাবের ১৬ নম্বর কোডের মাধ্যমে তিনি প্রতি মাসে সরকারি বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষক ও কর্মচারীর মধ্যে এমপিওভুক্তি হয়েছে ১৩ জনের। এর মধ্যে ১০ নম্বরে রয়েছে জুঁইয়ের নাম। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইমরুল কায়েস, সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষক মিল্টন আজিজ ও লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল হাসানের এখনও এমপিওভুক্তি না হওয়ায় তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, প্রতি মাসে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে কাগজপত্রে জুঁইকে কর্মস্থলে উপস্থিত দেখানো হয়। আদতে তিনি প্রতিষ্ঠানে কখনও আসেন না। তাকে কর্মস্থলে কেউ কোনো দিন দেখেননি। এমনকি জুঁইয়ের সঙ্গে কারও পরিচয়ও নেই, চেহারাও চেনেন না। তবে তারা শুনেছেন জুঁই নামের একজন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা সুলতানা দাবি করেন, জুঁই তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি কর্মচারী হিসেবে স্কুলে নিয়মিত আসেন। তার অনুপস্থিতির বিষয়টি সঠিক নয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে কেউ কখনও অভিযোগ করেননি। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। স্কুল পরিদর্শনকালে কখনও তিনি জুঁইকে দেখেছেন কিনা, তা জানতে চাইলে– এখন গাড়িতে আছি, কথা শোনা যাচ্ছে না অজুহাত দিয়ে কথা বলা বন্ধ করেন।
এ ব্যাপারে জুলিয়া আকতার জুঁই জানান, তিনি বগুড়া শহরে থাকেন। সেখান থেকে নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত হন বলে দাবি করেন। শহর থেকে ধুনটের বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এ পথে কীভাবে যাতায়াত করেন এবং সেখানে সর্বশেষ কী কাজ করেছেন জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে পরে জানাবেন বলে কথা শেষ করেন।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম বলেন, ‘আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আশ্চর্যজনক এবং গুরুতর অপরাধ। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’