দাবদাহে স্কুলে অনলাইনে পাঠদান চালুর ভাবনা

ননী গোপাল সূত্রধর |

কারখানা বন্ধ রেখে উৎপাদন যেমন আশা করা যায় না তেমনি  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আদৌও শিক্ষাদান হয় না। আমরা করোনাকালীন সময় সেটা উপলব্ধি করেছি সেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কতোটা ক্ষতি হয়েছে তা এখন অত্যন্ত কঠিণভাবেই উপলব্ধি করতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় যেমন পিছিয়ে গেছে তেমনি অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে যা ভবিষ্যৎ দেশ উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। প্রতিনিয়ত দেখছি কোমলপ্রাণ ঝরে পড়া ছেলেরা নিষিদ্ধ শিশুশ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে এবং মেয়েদের বেশিরভাগই বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। তবে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও করোনাকালীন অনলাইন/ভার্চ্যুয়াল শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো তবে এর সুফল বেশি পরিমাণে না পেলেও একেবারে কমও ছিলো না।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে গরম শীত উভয়ই আজকাল বেশি অনুভূত হয়। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা যে নেতিবাচক বিরূপ প্রভাব ফেলছে তা আগামী প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে নিশ্চিত আশঙ্কার ইঙ্গিত বহন করছে। এমনিতেই শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ মোবাইল ফোন ইন্টারনেট, ফেইসবুক, টিকটক, পাবজি, কিশোর গ্যাংসহ নানান অপরাধ কর্মকাণ্ড ও জীবননাশকারী মাদকে আসক্ত হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ না করে বিকল্প কিছু ভাবা অতি জরুরি। শিক্ষানুরাগী অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ভাবনার সমন্বয়ে বিকল্প কিছু প্রস্তাব পেশ করছি।

দাবদাহকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সকাল ৭:৩০ থেকে সকাল ১০:৩০ পর্যন্ত চালু রেখে প্রতিদিন ৪-৫ বিষয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা। এক্ষেত্রে শহুরে ও গ্রামীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সময়সূচির কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। কেনোনা শহরের তুলনায় গ্রামে তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির তারতম্য রয়েছে।

শিল্প কারখানার মতোই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান চলাকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। 

প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যাবস্থা রাখা। তাপপ্রবাহকালে সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য  স্যালাইন  ও প্রযোজনীয় ওষুধ সামগ্রী সরবরাহ করা। এই সময়ে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি পানে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা।

শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম এর ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করা। যেমন- সাদা সুতি কাপড়ের মার্জিত টি-শার্ট গেঞ্জি, প্যান্ট/ফ্রক জামা-পায়জামা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান। কেডস না পরে স্বাভাবিক আরাম ও স্বস্তিদায়ক জুতা ব্যবহার করা।

সীমিতভাবে অনলাইন পাঠদান চালু রাখা। তবে মোবাইল ফোনে আসক্তি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলাকালীন অভিভাবকদের সার্বক্ষণিক সক্রিয় মনিটরিং খুবই দরকার।

পরিশেষে, সবকিছু বিবেচনায় এনে নিদেনপক্ষে শ্রেণি পাঠদান কীভাবে চালু রাখা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ভূমিকা রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়ার তাগিদ দেয়া। শিক্ষা ছাড়া সফল দেশ ও জাতি গঠন কল্পনাতীত। শিক্ষায় বিনোয়োগ বাড়ানোর তাগিদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের থাকা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই সেটা হতাশাজনক। সাময়িক সমাধানের পথে না হেঁটে আমাদের উচিত হবে শিক্ষা ক্ষেত্রে যতো সমস্যা আছে তার স্থায়ী সমাধান করা।  আর তা করা গেলেই উন্নয়ন হবে শিক্ষার, সমাজ হবে সভ্য ও জ্ঞান-গরিমা সমৃদ্ধ ।

লেখক: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, শশীদল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজ, কুমিল্লা

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046899318695068