দিনদুপুরেই লোপাট জমি, চর, বাঁধের মাটি

আমাদের বার্তা, ঝালকাঠি |

ঝালকাঠিতে অনেকটা অবাধেই ফসলি জমি, নদীর চর, এমনকি বেড়িবাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মাটি ব্যসায়ীরা। কেবল রাতের আঁধারেই নয়, দিনের বেলাতেও চলছে এমন কাজ। জমির উপরিভাগের মাটি কাটায় কৃষি জমির উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি নদীর চর ও বেড়িবাঁধের মাটি কাটায় ভাঙনের হুমকির মুখে নদী পাড়ের মানুষ।

ঝালকাঠিতে ইটভাটা, নিচু জমি ভরাটসহ বিভিন্ন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নদীর চর, ফসলি জমির উপরিভাগ এমনকি বেড়িবাঁধের মাটি। এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ী রাতের আঁধারে জেলার নির্জন এলাকার বেড়িবাঁধের মাটি কেটেও বিক্রি করছেন। 

মাটি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় দিনের বেলাতেও নদীর চর কিংবা ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে দেরারচে বিক্রি করে দিচ্ছেন।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা সদর, রাজাপুর, নলছিটি ও কাঠালিয়া উপজেলার প্রায় ৩৫টি স্থানে মাটি কাটার এমন অবৈধ কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ ব্যবসায়ীরা। 

আর বেশিরভাগ মাটিই যাচ্ছে জেলার অর্ধশতাধিক ইটভাটায়। ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি চর ও বেড়িবাঁধ কাটায় নদী ভাঙন ও বন্যায় ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। আশঙ্কাজনক হারে কমছে চাষযোগ্য জমির পরিমাণও।

এদিকে অনেক জায়গায় জমিতে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেয়ায় কমছে জমির উর্বরতা শক্তি। আশঙ্কাজনক হারে কমছে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরি করা যাবে না।

ইটভাটা অনুমোদন দেয়ার সময় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয়া হয় ইটভাটার মালিকদের।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলার প্রায় অর্ধ শত ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় বছরে আট মাস ইট তৈরি হয়। প্রতিটি ইটভাটায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট প্রস্তুত করা হয়। 

এই ইট তৈরিতে কৃষিজমির উপরিভাগের এঁটেল মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইটভাটার মালিকেরা এ মাটি কিনছেন। 

আবার ভাটা মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে মাটি কেটে ইট তৈরি করছেন। ১ হাজার ফুটের এক গাড়ি মাটি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। প্রতিটি ইটভাটায় বছরে প্রায় পঞ্চাশ কোটি ফুট মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

দিয়াকুল গ্রামের কৃষক সোবাহান হাওলাদার বলেন, গভীর করে মাটি কাটার কারণে পাশের জমিগুলো ভেঙে পড়ছে। আমরা বাধা দিলেও মাটি ব্যবসায়ীরা তা মানেন না। 

জমির মধ্য থেকে যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে এসব জমিতে আর ফসল হবে না। মাটি কাটা বন্ধ না করা হলে ফসলের উৎপাদন কমে যাবে।

চরবাটারাকান্দা গ্রামের কৃষক সোবাহান হালাদার বলেন, বেড়িবাঁধের মাটিও রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। আমরা দেখলেও বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছিনা।

জেলা সদরের পোনাবালিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের নুরবানু বলেন, আমরা নদী পাড়ে থাকি। এভাবে নদীর চরের মাটি কাটা হলে ভাঙনের কবলে পড়তে আমাদের বেশি সময় লাগবে না।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল বলেন, অবৈধ এই মাটি বিক্রির চক্রটিকে রুখতে আরো কঠোরভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

প্রসঙ্গত, কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, অবৈধ এ মাটিকাটা চক্রের কবলে নদী ভাঙনের হুমকিসহ জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার ফলে জেলার প্রায় একশ হেক্টর ফসলি জমির কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার শঙ্কায় পড়েছে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048530101776123