পাঠ্যবই ও নতুন কারিকুলামদীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য

দৈনিক আমাদের বার্তা প্রতিবেদক |

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা ডা. দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েই দেশের শিক্ষাখাত ধবংসের জন্য উঠেপড়ে লেগে যান। সঙ্গীছিলেন তার আপন ভাই ওয়াদুদ টিপু ও চাঁদপুর পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের ব্যাচেলর অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটপেস্ট অধ্যাপক ভিসি মশিউর রহমানসহ কয়েকজন। শিক্ষার প্রতিটি সেক্টরে গড়ে তুলেছিলেন ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের সাম্রাজ্য। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পযন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন দীপু। তিন শতাধিক বারেরও বেশি ১৮৬টি দেশ ভ্রমণ করেন সরকারি খরচে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষামন্ত্রীর নিযুক্ত করা হয়। সর্বশেষ তিনি সমাজ অকল্যাণের দায়িত্বও বাগিয়ে নিয়েছিলেন।  

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্যদের সঙ্গে দীপুও পলাতক ছিলেন। এরপর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর দু’দফা রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি। 

 অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনত নোট-গাইড বিক্রি বন্ধ

ছিল। কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে সহযোগী বই হিসেবে প্রচলিত ছিল গাইড বই। নোট-গাইডের বিপক্ষে ব্যাপক কথা বললেও তিনি নিজেই বখরা নিতেন এসব সংগঠন থেকে। এই সংগঠনের এক নেতা বলেন, আমাদের বাৎসরিক চুক্তি ছিল ২০০ কোটি টাকা। বছরে চারবার কিস্তিতে দিতে হতো। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষের দিনেও পাঠাতে হতো টাকা।  

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরপরই রতন মজুমদারকে এনসিটিবির চাঁদাবাজি ও লুটপাটের সুযোগ দিতে তথ্যজ্ঞ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। রতনের ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা খাওয়ার জন্য প্রায় কোটি টাকা খরচ করেছে এনসিটিবি। রতনের গাড়ীর দরজা খুলে ধরা ও চেয়ারে বসিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় উ্ত্তীর্ণ ডজনখানেক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা নিযুক্ত ছিলেন।   

পাঠ্যবই থেকে টাকা নেওয়ার প্রচলন  শুরু হয় সাবেক  শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আমল থেকে। প্রকাশকরা সব ঘাটে ঘুস দেওয়ার পরও নাহিদ আমল থেকে শুরু ছাপা হওয়া প্রতিটি বই থেকে ২৫ পয়সা করে মন্ত্রীর ফান্ডে দেওয়ার। দীপু মনি সেটাকে বাড়িয়ে ৫০ পয়সা করেন।  

টাকা তিনি শুধু যে গাইড বই প্রকাশনী থেকে নিতেন তা নয়। ডা. দীপু মনির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নতুন শিক্ষাক্রম ও বই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। কয়েক বছর ধরে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে কিছু বই চলে আসলেও তার আমলে তিনি দিতে ব্যর্থ হন। বরাবরই বইয়ের পাণ্ডুলিপির কারণে এই দেরি হতো। এই দায়িত্ব জাতীয়

শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থাকলেও দীপু মনি, রতন মজুমদার ও মশিউর রহমান পড়ে দেখার জন্য নিতেন এবং দীর্ঘদিন আটকে রাখতেন। এসবের সমন্বয় করতেন দীপুমনি ও রতন ঘনিষ্রঠ এনসিটিবির হিসাব বিজ্ঞানের অধ্যাপক সাইদুর রহমান, প্রভাষক নুর কুতুবুল আলমসহ কয়েকজন।  প্রতি বছর প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানো হতো। পুরো লুটপাট জালিয়াতির সঙ্গে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যানরা-উৎপাদন নিয়ন্ত্রকরা জড়িত ছিল। সর্বশেষ চেয়ারম্যান ক্রিকেটার মাশরাফির চাচা। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনিও পলাতক।  

ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে পরিবর্তনের হোতা নুর কুতুব কুখ্যাত শাহেদুল খবির গংয়ের প্যানেল থেকে নির্বাচিত। গত ৫ বছরে ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে দেশের প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত ছিলেন। দীপুর শিক্ষাক্রম নিয়ে যারাই সোচ্চার ছিলেন তাদের সবাই হুমকি-ধমকি ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করারও অভিযোগ রয়েছে। গোপালগঞ্জের হওয়ায় ধরাকে সরা জ্ঞান নুর কুতবের বিরুদ্ধে একাধিক ডিজিও রয়েছে বলে জানা গেছে।  পাঁচ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।       

নাম প্রকাশে অনিচছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, দীপু মনির ভাই টিপু টেলিফোন করে টেন্ডার দেওয়া নেওয়ার হিসেব নিয়ন্ত্রনকালে ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ ভাষায় কথা বলতেন। 

এদিকে আজ ২৭ আগস্ট পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দুর্নীতিবাজ সব কর্মকর্তার শাস্তি ও নিম্নমানের পাঠ্যবই সরবরাহকারীদের কালো তালিকাভুক্ত করার দাবিতে এনসিটিবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল খান ও বৈষম্যবিরোধী মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের আহবায়ক ডা. দিদারুল আলম ও মো. মোর্শেদ আজমসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় বৈষম্যবিরোধী মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা, এনসিটিবি‘র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিগত বছরগুলোতে নিম্নমানের বই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণসহ এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থায়ীভাবে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি জানান। 

এ ছাড়াও তারা আরো বলেন, ইউনিসেফ নির্দেশিত মানসম্পন্ন পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে হবে। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করে কারিকুলাম সংশোধন সাপেক্ষে ব্যাপক সংখ্যক ছাপাখানার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাবর্ষের প্রক্রিয়াধীন সব দরপত্র বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা শিট মেশিন সম্বলিত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহজ শর্তে স্বতন্ত্র প্যাকেজে ছোট ও মাঝারি আকারে লট সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

পর্ব -১ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004863977432251