দীর্ঘদিন ধরে আম্মানের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করেন অবন্তিকা, ব্যবস্থা নেননি প্রক্টর

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক:  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা গত বছরের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রক্টরের কাছে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে উত্যক্ত করা ও হয়রানির অভিযোগ জানিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে আম্মানের হয়রানি, হুমকির শিকার হচ্ছেন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছিলেন।

আইন বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অবন্তিকা ওই আবেদন করেন। আজ রোববার এই প্রতিবেদককে সেই আবেদনের একটি কপি পৌঁছে দেয় অবন্তিকার পরিচিত শিক্ষার্থী তারেক হাসান। তিনি বলেন, ‘আবেদনটি লেখার পরেই ছবি তুলে আপু আমাকে পাঠিয়েছিল। তবে সেটি আগেই কোথাও প্রকাশ করতে নিষেধ করেছিল। আপু বলেছিলেন, যদি এটি কোথাও প্রকাশ করি তবে আম্মান যেহেতু দ্বীন ইসলামের (অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর) রাজনীতি করে, রাস্তাঘাটে যেকোনো জায়গায় হামলা ও হত্যা করতে পারে।’ 

আবেদনপত্রটি দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত এ ঘটনার বিচার চান তারেক হাসান। 

আবেদনপত্রে অবন্তিকা অভিযোগ করেন, প্রথম বর্ষে পড়ার সময় অবন্তিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন আম্মান। অবন্তিকা তাতে রাজি হননি। এর পর থেকেই আম্মান উত্যক্ত ও হয়রানি শুরু করেন। হুমকি দেন, তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করবেন, যাতে অবন্তিকাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আম্মানের নিপীড়নের মাত্রা আরও বেড়েছে বলে আবেদনপত্রে অভিযোগ করেন অবন্তিকা। রাস্তায় চলাফেরার সময় , বিভাগের করিডরে একা থাকলে আম্মান অবন্তিকাকে ছাদে বা ফাঁকা ক্লাসরুমে নিয়ে যেতে চাইতেন। মেসেঞ্জারে তথ্য ছড়িয়ে অবন্তিকাকে অপদস্থ করার হুমকিও দিতেন।

তৎকালীন প্রক্টরের কাছে অবন্তিকা আরও অভিযোগ করেন, আম্মান তাঁকে দেখে অশ্লীল মন্তব্য করতেন। এর প্রতিবাদ করলে হুমকি ও নিপীড়ন আরও বাড়ত।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বাবা মারা যাওয়ার পর আম্মান আরও বেশি নিপীড়ন শুরু করেন। ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে আম্মান হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার নামে প্রক্টর স্যারের কাছে নালিশ দিবি? দে, দেখি কী করতে পারস। প্রক্টর স্যারকে একটা কল দিলেই স্যার ধরেন; কারণ, আমি সাংবাদিক।’ আম্মান আরও বলেন, ‘তুই জানস কোতোয়ালি থানায়ও আমার কেমন লিংক? এক সেকেন্ড লাগবে তোকে ফাঁসাতে’।

এসব হুমকি ও নিপীড়নের কারণে অবন্তিকা কুমিল্লায় চলে যান। কিছুদিন ক্লাস করেননি। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে তৎকালীন প্রক্টরকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানান তিনি।

এই অভিযোগ ও প্রতিরোধের আবেদন পাওয়ার পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামালের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক এই প্রক্টর  বলেন, ‘আমরা যখন আবেদনটি পেয়েছিলাম, এর তিন দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমদাদুল হক মারা গিয়েছিলেন। সে সময় উপাচার্যের নির্দেশনা ছিল কোনো অভিযোগ এলে যেন আমরা অভিযোগকারীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলি। আমরা অবন্তিকাকে অফিসে এসে কথা বলার জন্য জানিয়েছিলাম। কিন্তু সে আসেনি। পরবর্তী সময়ে কোনো যোগাযোগও করেনি।’

অভিযুক্ত আম্মানের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো চেষ্টা করা হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নে সাবেক প্রক্টর বলেন, পরবর্তী কোনো নির্দেশনা না থাকায় তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।

অভিযুক্ত আম্মান কোন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন কি না, সে বিষয়ে ক্যাম্পাসের কেউ বিস্তারিত জানাতে পারেনি। তবে ক্যাম্পাসে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে তিনি চলাফেরা করতেন বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003183126449585