দুই কর্মকর্তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মচারীরা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব ও এক যুগ্ম সচিবের দুর্ব্যবহারে কর্মচারীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে—এমন অভিযোগ লিখিতভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে জমা দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। অভিযোগের কপি হাতে পৌঁছেছে।

জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের কাছে জমা দেওয়া এ অভিযোগ নিয়ে এরই মধ্যে প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কারণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো এমন অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের সই করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দুই কর্মকর্তার কারণে সংশ্লিষ্টদের জন্য কর্মপরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। গত এক বছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভা ও রিপোর্ট অনুবিভাগের বিভিন্ন শাখায় কর্মরত

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে,Ñযা একদিকে যেমন অগ্রহণযোগ্য, তেমনি অপেশাদারিত্বের চরম দৃষ্টান্ত।

এই অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরীন এবং মন্ত্রিসভা/রিপোর্ট ও রেকর্ড অধিশাখার যুগ্ম সচিব ইয়াসমিন বেগম তাদের অধীনস্তদের প্রতি রূঢ় আচরণ করে থাকেন। সামান্য ভুলের কারণে কারও কারও জীবন দুর্বিষহ করছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে নানা ধরনের অগ্রহণযোগ্য আচরণ করছে। বর্তমানে তাদের এ আচরণ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের এরূপ রূঢ় আচরণের ফলে আমরা আতঙ্কিত। এতে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছি। তাদের এমন অসহিষ্ণু আচরণ, ব্যক্তি আক্রমণ যেমন অপেশাদারিত্বের বহিঃপ্রকাশ, তেমনি তাদের অযোগ্যতার লক্ষণও বটে।

এতে আরও বলা হয়, আমাদের ওপর বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া বিরূপ আচরণের নমুনা দেখে মনে হচ্ছেÑযেন আমাদের ‘বস্তি’ কিংবা ‘রাস্তা’ থেকে উঠিয়ে এনে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের ছোটলোকের বংশধর, কেরানির বাচ্চা, ক্রিমিনাল, বেয়াদবের বাচ্চাÑবলে সম্বোধন করেন। তারা আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বিভিন্ন উপনামে যেমনÑবেবি এলিফেন্ট, হাঁদা-বোদা, জমিদারের বাচ্চা, নবাবপুত্র বলে ডাকেন। এ ছাড়া তারা অপ্রয়োজনে ইচ্ছাকৃতভাবে অফিস সময়ের পরে আমাদের অফিসে আটকে রেখে হেনস্তা করেন। সবসময় চাররিচ্যুত করার হুমকি দেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চাকরি করার অযোগ্য বলে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন।

জানতে চাইলে সৈয়দা সালমা জাফরিন বলেন, আমি এসবের কিছু জানি না। কে অভিযোগ দিয়েছে বলতে পারছি না। অভিযুক্ত অপর কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব ইয়াসমিন বেগমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

একাধিক কর্মচারী বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আমরা প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে চাকরি করছি। এরকম দুর্ব্যবহারের শিকার কখনো হইনি। অতীতে কেউ কখনো কর্মকর্তারা-কর্মচারীদের সঙ্গে এমন খারাপ আচরণ করেছেন বলে আমাদের মনে পড়ে না। তাদের দুজনের দুর্ব্যবহারে আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি।

জানা গেছে, সৈয়দা সালমা জাফরিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নারীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের সেই তকমা ব্যবহার করেই তিনি ক্ষমতা দেখিয়ে চলেন। এমনকি তিনি তার ব্যাচমেটদের অনেকের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি খারাপ ব্যবহার করেন বলে প্রশাসনে দুর্নাম রয়েছে।

একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সরকারের অন্যান্য

মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও দপ্তর সংস্থার কাছে রোলমডেল হিসেবে বিবেচিত। এ বিভাগের মেধাবী, সুশিক্ষিত, দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের কর্মকর্তাদের পদায়ন হয়ে থাকে; কিন্তু সালমা জাফরিন ও ইয়াসমিন সেই সুনাম রাখতে পারেননি।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল মজুমদার মনে করেন, কর্মস্থল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি পরিবার বা সেকেন্ড হোম। এখানে সবাই মিলেমিশে কাজ করবেন—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি অধস্তনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, তা খুবই দুঃখজনক। এটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের জন্যও লজ্জার। কারণ তিনি তো সবারই অভিভাবক। সুতরাং তাকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। যদি অভিযুক্তরা সত্যি সত্যি কর্মচারীদের ‘কেরানির বাচ্চা’ কিংবা ‘নবাবপুত্র’ জাতীয় অশোভন শব্দ ব্যবহার করে গালি দেন, তাহলে কর্মকর্তারা তাদের আত্মমর্যাদার বিষয়ে অবহিত নন বলেই ধরে নিতে হবে। তারা যত বড় কর্মকর্তাই হোন না কেন, এ জাতীয় শব্দচয়ন করা একেবারেই অনুচিত। এ ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
বর্তমানে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha বর্তমানে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী শিক্ষাখাতের নতুন তদবিরবাজ তিতাস! - dainik shiksha শিক্ষাখাতের নতুন তদবিরবাজ তিতাস! শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে: সমন্বয়ক হান্নান - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে: সমন্বয়ক হান্নান তদন্ত রিপোর্ট না দিয়েই সটকে পড়ছেন শিক্ষা পরিদর্শকরা - dainik shiksha তদন্ত রিপোর্ট না দিয়েই সটকে পড়ছেন শিক্ষা পরিদর্শকরা বরখাস্ত হচ্ছেন শিক্ষা বোর্ডের সেই সচিব নারায়ণ নাথ - dainik shiksha বরখাস্ত হচ্ছেন শিক্ষা বোর্ডের সেই সচিব নারায়ণ নাথ আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028030872344971