মোহাম্মদ শাহজাহান সাহেব একজন মদরাসার প্রভাষক। ২০ বছর ধরে পড়ে আছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। বিনা পয়সায় কত শিক্ষার্থীকে মানুষ করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটাই তার আত্মতৃপ্তি। কিন্তু আর কতদিন? শরীর বলেও তো একটা কথা আছে। ৬ সদস্য নিয়ে রায়হান সাহেবের পরিবার। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার। বেঁচে থাকার তাগিদে বর্তমানে ফটোস্ট্যাট ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছেন এই শিক্ষক। দুই সন্তানকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন তার। টিউশনির পাশাপাশি ফটোকপির ব্যবসা করে চলে তার সংসার এভাবে কষ্টের কথাগুলো বলতে বলতে এক সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু তিনিই নন, এ রকম রয়েছেন আরো ১০ জন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হলো গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পটকা (সিনিয়র) দাখিল মদরাসা। কবে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. মো. সামসুল আলম প্রধানের ক্ষমতার দাপট থেকে মুক্ত হয়ে এমপিওভুক্ত হবে গত ২০ বছরের পুরনো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি?
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পটকা (সিনিয়র) দাখিল মদরাসার এইচএসসি (বিএম) শাখার ১১ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অনেকের শেষ হয়ে গেছে চাকরির বয়স। ভুক্তভোগীদের কর্ম জীবনের শুরু ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে। স্বপ্নে বুক বেঁধে কেটে গেছে ষোলো বছর। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে মেলে এমপিওর অনুমতি। আওয়ামী লীগের ওই প্রভাবশালী নেতার ক্ষমতায় পাথরচাপা পড়ে ১১ শিক্ষক-কর্মচারীর স্বপ্ন। আটকে যায় তাদের এমপিওভুক্তি। বেতন-ভাতা না পেয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এমপিওভুক্তি নিয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী শিক্ষক মাহমুদা পারভীন গাজীপুর আদালতে সিআর মামলা নং ৩০৩/২০২১ দায়ের করেন। অ্যাড. মো. সামসুল আলম প্রধানের ক্ষমতার দাপটে তিন বছর পাথরচাপা পড়ে থাকে মামলার তদন্ত। দীর্ঘ সময় পর সিআইডি গাজীপুর আদালতে মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ওই মদরাসার এইচএসসি বিএম শাখার বিভিন্ন শূন্য পদে বিধি মোতাবেক ডিসেম্বর, ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে নিয়ো প্রাপ্ত হন প্রভাষক পদে মোহাম্মদ শাজাহান, মো. জেবাহ্ উদ্দিন, মোশারফ হোসেন, মো. আসাদুজ্জামান, মাহমুদা পারভীন, মো. আমির হোসেন। এ ছাড়া কম্পিউটার মেকানিক পদে মো. আজহারুল ইসলাম, সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে আজিজুল হক, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী পদে আফরিন সুলতানা, টাইপিং ল্যাব সহকারী পদে হারুন অর রশিদ ও এমএলএসএস পদে মো. ইব্রাহীম ফকির।
মদরাসার সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সাবেক সভাপতি অ্যাড. মো. সামসুল আলম প্রধান ক্ষমতা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাকে চাপে রেখেছেন। কোনো কাজই স্বাভাবিকভাবে করতে পারি নাই। আমাকে চাপের মাধ্যমে বাধ্য করেছেন সাত শিক্ষকের নাম বাদ দিয়ে চার শিক্ষকের এমপিওর আবেদন করতে। দীর্ঘ সময় পরও ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি হয়নি। বর্তমানে ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি অ্যাড. মো. সামসুল আলম প্রধানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফোন করলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।