দুই বছরেই শিক্ষাবিচ্ছিন্ন ৮ লাখ শিক্ষার্থী

মুরাদ মজুমদার |

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নিয়মিত উপবৃত্তি এবং শিক্ষকদের জন্য টিউশন ফি ও বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহের পরও শুধু দুবছরেই প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। শ্রেণিকক্ষ শিক্ষকরা অবশ্য এটাকে মোটাদাগে ঝরে পড়া বলতে নারাজ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এসএসসি বা সমমানের পাসের পর বিদেশে চলে যায়, কেউ বা এক বছর বিরতি দিয়ে পরের বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন। আবার এসএসসি উত্তীর্ণ  ছাত্রীদের একটা অংশ বিয়ের পিড়িতে বসার পর তিন চার বছর গ্যাপ দিয়ে আবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নেন।

ব্যাখ্যা যা-ই হোক পরিসংখ্যান বলছে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছিলেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। তাদের মধ্যে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৯ জন। এই হিসাবে ৮ লাখ ৬১ হাজার ৬০৭ জন বা ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেনি বা ঝরে পড়েছে।

ঝরে পড়া উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসএসসি পাসের পর একাদশে ভর্তির আগেই ঝরে পড়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৩ জন। অর্থাৎ, এরা এসএসসি পাসের পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিই হননি। আর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে নিবন্ধন করেছিলেন ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৩ জন। তাদের মধ্যে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। একাদশে ভর্তি থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত লেখাপড়া থেকে সরে গেছে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৫৪ শিক্ষার্থী, যা ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ। এই দুই হিসাবেই এসএসসি পাশ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বসা পর্যন্ত ঝরে পড়ার প্রকৃত সংখ্যাটি দাঁড়াচ্ছে ৮ লাখ ৬১ হাজার ৬০৭ জন বা ৪১ শতাংশ। 

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এসএসসি বা এইচএসসি স্তরে প্রতিবছরই কিছু শিক্ষার্থী লেখাপড়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। নিবন্ধনের পর পরীক্ষার সময় এলে এ সংখ্যাটি প্রকাশ পায়। কিন্তু তারা কেন লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে, সেই গবেষণা শিক্ষা বোর্ড থেকে কখনো করা হয়নি। তবে এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাজ আছে। তারাই এ নিয়ে ভালো বলতে পারবেন। যদিও সব সময়ের মতোই বলা যায়, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এসএসসি পাসের পর বড় একটা অংশ কর্মজীবনে ভিড়ে যায়। তাদের মধ্যে ছেলে-মেয়ে উভয় আছে। এর নেপথ্যে দারিদ্র্য বড় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া মেয়েদের একটা অংশের বিয়ে হয়ে যায়। তবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য কারিগরি শাখায় প্রতিবছর এক থেকে দেড় লাখ শিক্ষার্থী চলে যায়। সংখ্যা কম হলেও কিছু শিক্ষার্থী বিদেশে কাজে কিংবা লেখাপড়া করতে যায়। তাই পরীক্ষায় অংশ না নেয়া সবাই ঝরে পড়েছে-এমন সরলীকরণ ঠিক হবে না।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৫৪ জন শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে নিবন্ধন করেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না, তাদের মধ্যে ছেলের সংখ্যা বেশি। মোট ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৮ ছাত্র একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় বসছেন ৬ লাখ ১৮ হাজার ২০৩ জন। বাকি ২ লাখ ৮০ হাজার ১২৫ জন বা ৩১ দশমিক ১৮ শতাংশ ঝরে পড়েছে বা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। অন্যদিকে ছাত্রীদের মধ্যে নিবন্ধন করেছিলেন ৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৬৫ জন, কিন্তু পরীক্ষা দিচ্ছে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৬ জন। বাকি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৯ জন ঝরে পড়েছে।

এবার যারা এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তিন বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সে বছর ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহজ বিষয়ে বেশি পাস করলে এইচএসসি পর্যন্ত টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে গেছে তিন বিষয়ে পরীক্ষায় বসা শিক্ষার্থীরা। ফলে উত্তীর্ণদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশেরই এখন হদিস নেই। এই হিসাবে এবার ঝরে পড়ার হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে মনে করেন বোর্ড কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তারা এ নিয়ে গবেষণারও প্রয়োজন বলে মনে করেন।

প্রসঙ্গত, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৯ জন। বাকিরা এক, দুই এবং তিন বা সব বিষয়ে গত বছর ফেল করা এবং অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী।

 

 

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027499198913574