উচ্চ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে এবার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিনই সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন দফতরে অভিযান চালাচ্ছেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। এতে হাতেনাতে ধরাও পড়ছেন অনেকে। মাঝে মাঝে অনিয়ম করার সময় ধরা পড়া বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে হচ্ছে বিভাগীয় মামলা। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকীকে প্রধান করে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যবিশিষ্ট এই টাস্কফোর্সের অন্য দুই সদস্য হলেন- আপিল বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এম এম মোর্শেদ এবং হাই কোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন আরও জানিয়েছে, সরাসরি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী টাস্কফোর্সের কার্যক্রম তদারক করছেন। নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং জরুরি প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতিকে টাস্কফোর্সের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানীও টাস্কফোর্সের কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এই টাস্কফোর্স গঠনের পর থেকে সেবার মান বেড়েছে বলেও দাবি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের। এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি-অনিয়ম ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন করাকে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
তারা বলেন, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি-অনিয়ম একরকম ওপেন সিক্রেট ছিল। এখন নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমতে পারে। জানা গেছে, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি হিসেবে এজলাসে বসার প্রথম দিনই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয়টি তাঁকে অবহিত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। পরে ওই দিন নিজের বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। দুর্নীতি-অনিয়ম ঠেকাতে একাধিক কমিটিও করে দেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দুর্নীতি রোধে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। তাদের নির্দেশ দিয়েছি সুপ্রিম কোর্টের কোনো সেক্টরে দুর্নীতি চলছে কি না তা নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যদি আমার কাছে আসে, আমি অন্তত এক মিনিটও অপেক্ষা করব না তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, তিনি যত উচ্চপদস্থ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা হন বা সুপ্রিম কোর্টের কর্মচারীই হন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, টাস্কফোর্সের সদস্যরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিভাগে অভিযান চালাচ্ছেন। তারা অনেকগুলো সফলতাও পেয়েছেন। হলফনামায় জালিয়াতি ধরেছেন তারা। অবৈধ লেনদেন করার সময়ও হাতেনাতে ধরেছেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। এসব অভিযানে কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। আর জড়িত বিচারপ্রার্থীদের মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীদের সহকারীরাও অনেক সময় ধরা পড়ছেন। প্রথম দফায় তাদেরও সতর্ক করা হচ্ছে। তবে পরবর্তী সময়ে এদের কেউ আবার ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমান প্রধান বিচারপতি এই টাস্কফোর্স করে দেওয়ার পর বিচারপ্রার্থীদের সেবা পেতে যে ভোগান্তি ছিল তা অনেকাংশেই কেটে গেছে।’ উচ্চ আদালতের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন করাকে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। .
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি একটা ওপেন সিক্রেট বিষয়। সবাই জানে, আবার কেউ জানে না। তাই প্রধান বিচারপতি যে উদ্যোগটা নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। এই টাস্কফোর্স নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলে সুপ্রিম কোর্টের অনিয়ম-দুর্নীতি কমতে পারে বলেও মনে করেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।