দুর্নীতি : স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বন্দ্ব আর অনিয়ম-দুর্নীতিতে হারিয়ে যেতে বসেছে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।  গত ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রেখেছে ইউজিসি। প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পার করলেও এখনো তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। অথচ এর পরে প্রতিষ্ঠিত অনেক বিশ্ববদ্যালয় নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে গড়ে তুলেছে অনেক বড় এবং নিজস্ব ক্যাম্পাস। 

 

শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার  অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ পূর্ণকালীন শিক্ষকের ১৬০ জনের সই করা অভিযোগ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনা নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রি করা হলেও সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা হয়নি। ট্রাস্টিদের ব্যক্তিগত ঋণের টাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দেব বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রাখা, অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়মের অভিযোগ এলে অবশ্যই তা তদন্ত করে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যদি অনিয়মই না থাকত তাহলে ২০-২১ বছরেও কেন নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারল না?’

তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। তবে তারা অক্টোবরের মধ্যে স্টিল স্ট্রাকচারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাবে। তখন তারা নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। আগে এর চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়টির বাৎসরিক আয় ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা হলেও কয়েক বছর আগে আয় ছিল বছরে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। তখন আয়ের তুলনায় ব্যয় তেমন ছিল না। তারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের কোনোরকমের ছাড় দেয় না। টিউশন ফি জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট দিন পার হলেই এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের হিসাবে আয় কম দেখানো হয়েছে। ব্যয় অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। ওই বছর করোনা থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন-ভাতাই দেওয়া হয়নি। অথচ বড় অঙ্কের টাকা বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে। মোট ব্যয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ অন্যান্য খাতে দেখানো হয়েছে, যা সঠিক নয়।

জানা যায়, ধানমন্ডির কেয়ারি প্লাজা নামের শপিং মলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি নিজস্ব ফ্লোর ছিল। সেখানে আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ফ্লোর দুটি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। এ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা হয়নি। এ টাকা ফেরত আনলে সংকট অনেকটা দূর হবে। আর এজন্য দায়ী ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলছেন, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের নামে নেওয়া প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে ট্রাস্টিদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়েছে। ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া বেআইনি। এত বছর ধরে এসব ঋণ ও এর সুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণসহ অন্যান্য ইস্যু সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইউজিসির একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের একজন সদস্য বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোনো বেতন-ভাতা বকেয়া নেই।’ তিনি বলেন, বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য কতিপয় নামধারী সাংবাদিক ও মার্কেটিং কর্মকর্তা এসব অহেতুক ঝামেলা করেন। এরা এক ধরনের চাঁদাবাজ। যদিও তারা দাবি করেন সাংবাদিক।  

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময় সিদ্ধেশ্বরীতে লিজ নেওয়া বাড়িতে এবং ধানমন্ডিতে ক্যাম্পাস ছিল স্ট্যামফোর্ডের। এখন শুধু সিদ্ধেশ্বরীতে ক্যাম্পাস আছে। তবে ওই বাড়ির লিজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ইউজিসির তাগাদার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষদিকে তারা বলেছিল, ২০২৫ -এর আগে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব নয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রেখেছে ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক এমএ হান্নান ফিরোজ। তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটিতে জটিলতা দেখা দেয়। ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। হান্নান ফিরোজের স্ত্রী ফাতিনাজ ফিরোজ ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান। সম্প্রতি ডেমরার গ্রিন মডেল টাউনে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। স্টিল স্ট্রাকচারে তৈরি ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে ইউজিসিকে জানিয়েছে তারা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ - dainik shiksha প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা - dainik shiksha ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ - dainik shiksha বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ - dainik shiksha ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে - dainik shiksha নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে - dainik shiksha আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022790431976318