দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকল্পটির অধীনে ১০১০টি মাদরাসা ও ২০২০ জন শিক্ষক এবং ১০১০ জন অফিস সহায়ক রয়েছে। শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসা একজন প্রকল্প পরিচালকের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্পটি। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকল্পটি পুনরায় অনুমোদনের জন্য প্রত্যেক জেলায় এক এক জন দালাল শিক্ষক নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা অনুমোদন লাভ করে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং তার ভাগিনা পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মাওলানা ওমর ফারুক মূলত এই প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ কর্তা। এই প্রকল্পের অনেক শিক্ষক আবার আবুল কালাম আজাদের মালিকানাধীন একটি এনজিওর কর্মী হিসেবে কাজ করে।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকল্পটি পাস হলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা প্রকল্পের সময় গণনা করে প্রত্যেক শিক্ষককে বেতন বাবদ সোয়া তিন লাখ টাকা বকেয়া দেয়া হয়। উক্ত টাকা না দেয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইলিং করে প্রকল্প পরিচালক মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই কাজের বিরোধিতা করায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক আব্দুর রশিদ আল মামুনকে বান্দরবান বদলি করা হয়। উল্লেখিত প্রকল্পের অধীনে শিক্ষক নিয়োগের সময় তিন শত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে কোনো শিক্ষক কোনো প্রকার সংগঠন, শিক্ষক কল্যাণ সমিতি করতে পারবে না। অথচ প্রকল্প পরিচালক ঢাকা জেলার শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে দারুল আরকাম শিক্ষক কল্যাণ সমিতির নামে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নানাভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রকল্প পরিচালক। রাঙ্গামাটি জেলার বড়কল উপজেলার দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল্লাহ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রকল্পটি পুনরায় পাস করার জন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দারুল আরকামের প্রত্যেক শিক্ষক হতে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করতে মাঠে নেমেছেন সিন্ডিকেটের সদস্য, প্রকল্প পরিচালক ও কম্পিউটার অপারেটর আব্দুর রাজ্জাক। বর্তমানে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসা প্রকল্প পরিচালক আব্দুস সবুরের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকদের জেলা কার্যালয় থেকে নিয়োগ ও পদায়নের নিয়ম ছিল। কিন্তু পোস্টিংয়ের এ ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে প্রকল্প
পরিচালক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পোস্টিং বাণিজ্য শুরু করেছেন। এতে এলাকার জেলায় কোনো উপজেলায় শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও অন্য উপজেলা থেকে শিক্ষক বদলি করতে পারে না। এমনকি জেলা কার্যালয়ের কোনো সুপারিশও প্রকল্প পরিচালক গ্রহণ করে না। এতে করে কোনো কোনো উপজেলায় অতিরিক্ত শিক্ষক এবং কোনো কোনো উপজেলায় শিক্ষকবিহীনভাবে চলছে প্রকল্পটি। শিক্ষকদের বদলির প্রয়োজন হলে সিন্ডিকেটের সদস্য শিক্ষকদের মাধ্যমে কম্পিউটার অপারেটর আব্দুর রাজ্জাকের হাতে নির্ধারিত অর্থ এলে পরে বদলির আদেশ কার্যকর হয়।সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার উগলছড়ি দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক রাশেদ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার থানা মসজিদে দীর্ঘ পাঁচ মাস যাবত মাদরাসায় ক্লাস না করে ইমামতি করেন। কিন্তু তিনি দারুল আরকাম প্রকল্প থেকে বেতন পাচ্ছেন। এমনিভাবে বহু শিক্ষক অন্যত্র চাকরি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করেও ঘরে বসে বেতন পাচ্ছেন। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের নানা অভিযোগে চাকরিচ্যুত, বেতন-ভাতা বন্ধের অভিযোগ ওঠে। দারুল আরকাম প্রকল্পের দুর্নীতি বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকল্পটি প্রথম থেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে।
বর্তমানে প্রকল্প দপ্তরে যা হচ্ছে, সেসব কর্মকাণ্ডের সাথে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী অভ্যস্ত নয়। শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসা বর্তমান প্রকল্প পরিচালকের কর্মকাণ্ড ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই অবগত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বার্ষিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল। ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।