দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের টাকা হরিলুট!

কামরুজ্জামান সুইট, ঝালকাঠি |

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস যাই হোক হাতেগোনা নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে বরাদ্দ নেয় একটি সিন্ডিকেট। প্রধান শিক্ষকদের সিন্ডিকেটে শিক্ষক নেতা, বড় কোনো নেতার আত্মীয়, শিক্ষা অফিসের দালাল, বিদ্যালয়ের চেয়ে শিক্ষা অফিসে বেশি সময়দানকারীরাই এসব বরাদ্দ পান। 

কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় ঘুরেফিরে একই নাম আসে বলে জোর অভিযোগ উঠেছে। দৈনিক আমাদের বার্তার সরেজমিন অনুসন্ধানেও এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসার কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই আবেদন পাস করে বরাদ্দ দেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সমন্বয় করে বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগাভাগি করে নামকাওয়াস্তে কাজ করে সবাই মিলে সরকারি টাকা লোপাট করেন।

ঝালকাঠি জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৮৫টি। এগুলোর মধ্যে সদরে ১৬২, নলছিটিতে ১৬৭, রাজাপুরে ১২৪, কাঠালিয়া উপজেলায় ১৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০৬টি বিদ্যালয়কে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সদর উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২৫টি বিদ্যালয়কে। প্রতিবারই কোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা এই ২৫টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

জানা গেছে, গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চাওয়া হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতি বারের মতো তার অনুগত শিক্ষকদের স্কুলের তালিকা পাঠান। এসব বিদ্যালয়ে মোট ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ আসে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পানে’ ক্ষয়ক্ষতির তালিকাতেও এসব নামই দেখা গেছে। বাস্তবে যেগুলোর অধিকাংশতেই কোনো ক্ষয়ক্ষতিই হয়নি। 

সরেজমিনে শাহী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিকনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন খুঁজে হয়রান হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক আবু সুফিয়ান ইয়েন বলেন, আমার স্কুলে ক্ষতি হয়েছে, মোটর নষ্ট হয়েছে। 

টাইগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা ইতি রায় স্বীকার করে বলেন, আমার স্কুলের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ কে দিয়েছেন আমি জানি না। তবে এ বরাদ্দের টাকা দিয়ে কিছু কাজ করবো। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, একই স্কুলে প্রতিবার ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় আসার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা একটা পার্সেনটেজ নেন। উপজেলা এলজিইডি অফিসে কিছু টাকা দিয়ে এই বরাদ্দের টাকা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকরা ভাগ করে নেন। 

এদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার জসিম আহমেদ তালিকা পাঠিয়ে হজে গেছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তার সব অনিয়ম ও দুর্নীতির আরেক সহচর গোলাম রহমান প্রশিক্ষণে আছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।  

তবে কর্মকর্তাদের না পাওয়া গেলেও কয়েকজন প্রধান শিক্ষককে দেখা যায়, শিক্ষা অফিসে আড্ডা দিতে। নবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজান রহমানকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারীদের চেয়ারে বসে খোশগল্প করতে দেখা যায়। তার স্কুলে ক্ষয়ক্ষতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামান্য বরাদ্দের তদন্ত না করে পাশের উপজেলা নলছিটি যান। তারা ঝালকাঠি সদরের থেকে দ্বিগুণ বরাদ্দ পেয়েছে। ওয়াস ব্লকে বড় অনিয়ম হয়, সেগুলো দেখেন। 

স্কুল ছেড়ে শিক্ষা অফিসেই অলস সময় কাটানো কেফাইতনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গুলশানারা মোর্শেদা বলেন, আমার সভাপতি মনির হুজুর। তাকে চেনেন? আপনাকে দেখে নেবো। 

আর বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক কুমার সমদ্দার বলেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও যদি বরাদ্দ ফেরত যায় তাতে আপনাদের কোনো উপকার হবে? বরাদ্দ ফেরত গেলে আপনাদেরই ক্ষতি। তার চেয়ে এই অর্থ দিয়ে স্কুলগুলোর উন্নয়ন হবে এবং যদি উন্নয়ন না করে তাহলে ব্যবস্থা নেবো। 

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জেনেও যদি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা নিয়ম লঙ্ঘন করে থাকেন তাহলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023131370544434