করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চলমান দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ। এ পরিস্থিতিতে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে শিক্ষা ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বারবার তাগিদ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা শুধু শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস ও সম্প্রচারিত ক্লাসের কথা বলছেন। কিন্তু এসবেও সিংহভাগ শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে আবারও দূরশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ। এ সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনও নেয়া হয়েছে। যদিও আগের মতই এ সুপারিশও শুধুই ফাইলে বন্দি থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর কিছুদিন পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনার চলমান ছুটি কয়েক দফা বাড়ানোর পর আবারও ১২ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। একবছরের বেশি সময় ধরে ক্লাস থেকে দূরে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টিভি, অনলাইন, রেডিও মাধ্যমে ক্লাস চালু করা হলেও তা সর্বস্তরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে অনেকে পিছিয়ে পড়েছে। বাল্যবিবাহ, পরিবারে অশান্তি তৈরি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস শুরু করা হলেও এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার দুরশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর গত ফেব্রুয়ারি মাসের কার্যাবলি সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণে আরও সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রমে আরও সম্পৃক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে গত ৭ এপ্রিল লিখিতভাবে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগেও মন্ত্রণালয়গুলোর ডিসেম্বর মাসের কার্যাবলি সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রস্তাবে শিক্ষার্থীদের দুরশিক্ষণে আরও সম্পৃক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। প্রস্তাবে বলা ছিল, ‘করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দূরশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বলে শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের আরও সম্পৃক্ত করতে বিশেষ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। সে প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে গত ৩ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে বলেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
কিন্তু দুই দফা সুপারিশের প্রেক্ষিতেই ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা’ দিয়ে দায় এড়িয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দূরশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে সুস্পষ্ট কোন কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছেনা। সবস্তরের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ইন্টারনেট সংযোগ বা দূরশিক্ষণের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হয়নি। এমনকি অনলাইন ক্লাস কিছুটা সহজ করতে উদ্যোগ বা অনলাইন ক্লাস বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনাও দেয়া হয়নি।
যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অস্বচ্ছল পরিবারের কয়েককোটি শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাস কিভাবে নিশ্চিত করা হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন আছে।
সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিষয়টি স্বীকার করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাটাতে আমাদের সব অবকাঠামো ব্যবহার করছি। কিন্তু নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে আমরা পৌঁছাতে পারছি না। শিক্ষা সকলের জন্য। যাদের আনতে পারছি না তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, , ‘শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের ইন্টার্যাকশনের সুযোগ রেখেছিলাম। সেটি সাময়িকভাবে বন্ধ করেছি। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। সেটি বন্ধ করেছি। একজন শিক্ষক যেনও প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে তার একটি ফ্রেমওয়ার্ক আমরা তৈরি করছি। ’
যদিও শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণ সম্পৃক্ত করতে শুধু অনলাইন ক্লাস নেয়ার নির্দেশনা দিলেই হবে না। নিতে হবে সঠিক কর্মপরিকল্পনা। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দিতে হবে প্রশিক্ষণ। ব্যবহার করতে হবে তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সুবিধা দিতে হবে।
সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। একইসাথে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের এর আওতায় আনা যাবে না। আর প্রাথমিকের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই। নেই ইন্টারনেটের খরচ চালানোর টাকা। এ পরিস্থিতিতে তাদের সবার অনলাইন ক্লাস বা দূরশিক্ষণে অসম্ভব। আর বাড়ির কাজ বিতরণ ও সংগ্রহে শিক্ষকদের করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়বে।
এদিকে দূরশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের ফ্রি ইন্টারনেট দেয়ার বিষয়েও কোন পদক্ষেপ নেই। জানতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের জন্য ফ্রি ইন্টারনেট দেয়ার বিষয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ফ্রি ইন্টারনেট দিয়ে কি শিক্ষার্থীরা বিনোদন করবে নাকি শিক্ষার কাজে ব্যবহার করবে সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা কোথায়, কাকে ফ্রি দেব তা আগে সুনিশ্চিত হতে হবে। ফ্রি ইন্টারনেট পেয়ে নাটক-সিনেমা দেখবে তা হতে পারে না।’
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।