তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেছেন, বগুড়ায় ৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য আগামী অর্থবছরে ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ একর জায়গায় ১৬ তলাবিশিষ্ট স্মার্ট কর্মসংস্থানের ঠিকানা শেখ কামাল আইটি অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ১০০ একর জায়গায় স্থাপন করা হবে হাইটেক পার্ক। সেখানে বগুড়ার মাটিতে দেশীয় প্রযুক্তিতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হবে। কর্মসংস্থান হবে লাখো তরুণ-তরুণীর। এটি বাস্তবায়ন হলে বগুড়া স্মার্ট নগরী হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করবে।
আজ শনিবার সকালে বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত বগুড়া স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ কামাল আইটি অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, হাইটেক পার্ক ও দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী হবে ৪৫০ একর জায়গাজুড়ে। এ ছাড়া আগামী ৬ মাসে জেলার ৫০০ নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ, ইন্টার্নশিপ দিয়ে স্মার্ট উপহার হিসেবে ল্যাপটপ দেয়া হবে। তিনি বলেন, বগুড়া শহরকে গ্রিন, ক্লিন, সেফ ও স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁরা একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
বগুড়ার ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করে জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, বগুড়া ১৬ জেলার প্রবেশদ্বার। যোগাযোগ, অর্থনীতি ও শিক্ষায় অনেক এগিয়ে এ জেলা। শুধু শহরের শিক্ষার্থী সংখ্যা লক্ষাধিক। জেলায় পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী আছে। বগুড়ার তরুণেরা প্রচণ্ড মেধাবী ও স্মার্ট। বগুড়ার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি খাতে যে দক্ষতা ও সম্ভাবনা আছে, তা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো সরকার বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাজে লাগাননি। যদি বগুড়ার সম্ভাবনা কাজে লাগাত, তাহলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর তৃতীয় বৃহত্তম শিল্পনগরী হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিতি পেত বগুড়া।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে বগুড়ার স্মার্ট ছেলেমেয়েদের যে মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি সুপ্ত অবস্থায় আছে, তা বিকশিত করতে হবে। স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলার মাধ্যমে বগুড়ার তরুণদের সুপ্ত মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকশিত করার কার্যক্রম শুরু হলো। বগুড়ার তরুণদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারলে তারা শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
মেলায় ৫০ জন স্মার্ট নারী উদ্যোক্তাকে ৫০ হাজার টাকা করে উপহার দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও ৫০ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ ২০২৫ সালের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার রপ্তানি করে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করতে চায়। নতুন করে ১০ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায়। এ জন্য চার ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।’
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে মেলার উদ্বোধন করেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রফিকুন্নবী প্রমুখ বক্তব্য দেন। পরে প্রতিমন্ত্রী শেখ কামাল আইটি অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাইটেক পার্ক স্থাপনের সম্ভাব্য জায়গা হিসেবে সদর উপজেলার নূরুইলের বিল পরিদর্শন করেন।
দিনব্যাপী স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলায় চাকরিপ্রত্যাশী ৬ হাজার ৭১৫ জন তরুণ–তরুণী আবেদন করেন। দেশের ৩৩টি প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ৭৮০টি পদে চাকরির সুযোগ ছিল। তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে ১২ জনের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী। অন্যদের আবেদন যাচাই–বাছাই শেষে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।