বছরে এক লাখ লোক ক্যান্সারে মারা যায়। আর আক্রান্ত হয় দেড় লাখ। বাস্তব চিত্র এর চেয়েও খারাপ। কারণ হলো অনেক লোক চিকিৎসার আওতার বাইরে থাকে। যে কারণে অনেকেই পরিসংখ্যানের বাইরে থাকে। আমাদের দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসার ব্যবস্থা খুবই স্বল্প। ২০ লাখ মানুষ আছে ক্যান্সার আক্রান্ত। তাদের চিকিৎসায় যে বড় মাপের ব্যবস্থাপনা দরকার, সেটি আমরা পারিনি, তবে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।
রোববার রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিআরএইচ) এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ।
শুধু হাসপাতাল তৈরি করলে আর কিছু মেশিন কিনলেই চিকিৎসা হয়ে যাবে না বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী । তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সরকার অঙ্গিকারাবদ্ধ। তাই চিকিৎসা সেবা মূলত নির্ভর করে ডাক্তার-নার্সদের ওপর।
এই বিষয়গুলোতে ভবিষ্যতে আর ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এতে বৈষম্য রয়েছে। দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা করাতে পারে না। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয় বলে অনেক অর্থ খরচ হয়। এজন্য আমরা চিকিৎসায় বৈষম্য কমানোর চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ সংক্রমণব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কলেরা, ডায়রিয়ায় এখন আর মৃত্যু নেই। এখন আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগ বেড়েছে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মৃত্যুই অসংক্রামক রোগে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাকে। এছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সারে মৃত্যু হয় ৯ শতাংশ, গলার ক্যান্সারে ১৪ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। ক্যান্সারের কারণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ধূমপানে ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, খাবারে দূষণ ক্যান্সারের বড় কারণ। ক্যান্সার এমন রোগ, কোনো বয়স বা গোত্র রক্ষা পায় না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, চিকিৎসকদের অনেক বেশি মানবিক হতে হবে। ক্যান্সার হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকে আমি দেখি। চিকিৎসক নার্সরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
তিনি বলেন, সীমিত সম্পদের মধ্যেও আমাদের চিকিৎসক-নার্সরা এই হাসপাতাল কাজ করছেন। এজন্য তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে রোগীর সেবায় আরও আন্তরিকতা বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আটটি বিভাগে আট ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা রেখেছি। অনেকগুলো প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। আমরা প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। রেজিস্ট্রি নেই, যথেষ্ট পরীক্ষা নেই। তারপরও আমরা কাজ করছি। এই হাসপাতালকে নিয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।