দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে ৪২ শতাংশ : গবেষণার তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাভাইরাস মহামারীর অর্থনৈতিক প্রতিঘাতে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে বলে একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে এসেছে।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) ভার্চুয়াল আলোচনায় সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এ জরিপ তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশামিক ৩০ শতাংশ।

“২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জিইডি সানেমের গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছিল। কিন্তু সানেমের ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, দারিদ্রের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে।”

‘দারিদ্র্য ও জীবিকার ওপর করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহাবুবুল মোকাদ্দেম আকাশ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

এই দারিদ্র্যের হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি বেড়েছে জানিয়ে সেলিম রায়হান বলেন, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের সানেমের গবেষণায় এই হার নামে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশে।

“কিন্তু সানেমের ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের গ্রামে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।” 

একইভাবে শহরে দারিদ্র্যের হার ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ ও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে তা বেড়ে ৩৫ দশমিক ৪০ শতাংশ হয়েছে বলে জানান তিনি।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক জানান, বাংলাদেশের অতি দারিদ্রের হার ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বেড়ে হয়েছে ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

“রংপুর, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দারিদ্র্যের হার। অর্থাত্ গরিব হয়েছে আরো গরিব, ধনী হয়েছে আরো ধনী।”

দারিদ্র্যের হারের সঙ্গে আয় বৈষম্যও বেড়েছে জানিয়ে সেলিম রায়হান বলেন, মহামারী শুরুর আগে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে দেশের দরিদ্রতম ২০ শতাংশ মানুষ দেশের মোট আয়ের ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ পেত। আর দেশের মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ আয় করত দেশের ধনী ৫ শতাংশ মানুষ।

“কিন্তু করোনার প্রভাবে সেই অবস্থা পাল্টেছে। এখন দেশের মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ ধনী ৫ শতাংশের দখলে। দেশের মোট আয়ের ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ দরিদ্রতম ২০ শতাংশের দখলে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “এই দারিদ্র্যের হার যাতে দীর্ঘমেয়াদী না হয়, সেদিকে সরকারের খেয়াল রাখা দরকার। স্কুলগুলো আবার শুরু করতে হবে। চিকিত্সা খাতে সাবসিডি বাড়ানো দরকার। যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।”

সানেম ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সারা দেশে ৮ বিভাগের ৬৪টি জেলার ৫ হাজার ৫৭৭টি পরিবারের ওপর গবেষণাটি চালায়। নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা।

এই গবেষণার সময়কাল ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ থেকে নভেম্বর। অর্থাত্ করোনাভাইরাস মহামারীর আগের অবস্থার সাথে পরের অবস্থা তুলনা করা হয়েছে। এই গবেষণায় ফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022649765014648