দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফার্মেসি শিক্ষায় গুরুত্ব নেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর পুরো বিশ্বই এর ওষুধ উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার পর এ দেশেও শুরু হয়েছে কিছু গবেষণা। কিন্তু করোনার ওষুধ উদ্ভাবন নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। মূলত ফার্মেসিতে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরাই ওষুধ নিয়ে গবেষণা করেন। কিন্তু দেশে উচ্চশিক্ষায় ফার্মেসিতে আসন খুবই সামান্য। আর মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই চলে যান বিদেশে। যাঁরা থাকেন তাঁরা ওষুধ নিয়ে খুব একটা গবেষণা করেন না। রোববার (১২ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, দেশে বর্তমানে পোশাকশিল্পের পরই ওষুধ শিল্পের অবদান। দেশে মোট চাহিদার ৯৭-৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উত্পাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফার্মেসি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা উচিত ছিল বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ উল্টোভাবে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অর্থাত্ কর্মবাজারের সঙ্গে পড়ালেখার সংগতি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা দুই লাখ ৮৪ হাজার ৩২২টি। এর মধ্যে ফার্মেসিতে পড়ছেন মাত্র দুই হাজার ৪১৪ জন শিক্ষার্থী। ফলে গড় হিসাবে ফার্মেসিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ০.৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে মোট আসন ৪৩০, জাহাঙ্গীরনগরে ৩৯০, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২৮, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০৮, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯০ এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১৮টি। এ ছাড়া ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে অধ্যয়নের সুযোগ আছে। এতে শিক্ষার্থীসংখ্যা ১৩ হাজার ৭৭৪ জন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীসংখ্যা তিন লাখ ৬১ হাজার ৭৯২ জন। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩.৮০ শতাংশ আসনে ফার্মেসির শিক্ষার্থীরা পড়ছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়টির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তুঙ্গে। মেধাবী শিক্ষার্থীরাই এখানে পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু এখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশে গিয়ে আর ফিরছেন না। দেশ থেকে ফার্মেসিতে পড়ে গিয়েও অনেকে বিদেশে বড় গবেষণা করছেন। উদ্ভাবন করছেন নতুন ওষুধও। অথচ তাঁদের কাছ থেকে দেশ তেমন কোনো সেবা পাচ্ছে না। আর বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগই মানহীন। বিষয়টিকে পুঁজি করে অনেকেই ফার্মেসি খুলে বসে আছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছেন না। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা চাকরি পেলেও গবেষণায় তেমন কোনো অবদান রাখতে পারছেন না।

ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘গবেষণায় আমরা পিছিয়ে আছি। গবেষকদের ধরে রাখার জন্য যে প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া দরকার, তা দিতে পারছি না। ফলে অনেকেই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। ফলে দেশের কোনো জাতীয় দুর্যোগে আমরা বড় ভূমিকা রাখতে পারছি না। তবে কমিশনের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানে আছে একটি সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি স্থাপনের কথা। সেটা হলে গবেষণায় আমরা কিছুটা এগোতে পারব।’

ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘করোনা নিয়ে গবেষণার জন্য ফার্মেসি বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এই বিভাগটি নেই। বিষয়টি চালু করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই কমিশন থেকে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় রিসোর্স পারসন ও ল্যাবরেটরি না থাকায় তারা ফার্মাসির মতো বিষয়গুলো সহজেই খুলতে পারে না।’

ফার্মেসি বা ওষুধবিজ্ঞান হলো স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা। ওষুধ বানানো, এর মান নির্ধারণ, ব্যবহার, বিতরণ, পরিবেশন এসবই এর আওতাভুক্ত। একজন ফার্মাসিস্ট হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মেসি, কমিউনিটি ফার্মেসি, অনলাইন ফার্মেসি, ভেটেরিনারি ফার্মেসি প্রভৃতি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাপানের ফুজি ফিল্মের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তোয়ামা কেমিক্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিত্সার জন্য একটি ওষুধ তৈরি করেছিল। ওষুধটি করোনা রোগের চিকিত্সায় বেশ কার্যকর বলে দাবি করছেন অনেক গবেষক। বাংলাদেশের ওষুধ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিকন ফার্মা জাপানের কম্পানির কাছ থেকে ফর্মুলা এনে ওষুধটি তৈরি করে রেখেছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুততম সময়েই তা পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন এবং সরকারকে সরবরাহ করা যায়।

সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ গবেষণা। কিন্তু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছতে পারেনি। গবেষণায় খুব একটা মন নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। তবে দেশে যাঁরা গবেষক আছেন তাঁদের মধ্য থেকেও মলিকিউলার বায়োলজি, মাইক্রোবায়োলজি, জিন প্রকৌশল, ফার্মেসি বা বায়োলজিক্যাল ফ্যাকাল্টির গবেষকদের নিয়ে কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031619071960449