পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় লোকজনের চলাচলের রাস্তায় দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় একটি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। এতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পানছড়ি উপজেলার কলাবাগানে পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা অবস্থিত। মাদরাসার মধ্যদিয়ে চলাচলের রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসী ব্যবহার করে আসছেন। মাদরাসার শিক্ষকসহ প্রায় ২০টি পরিবার রাস্তাটি ব্যবহার করে মূলগ্রাম থেকে বাজারে আসা-যাওয়া করেন। স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এই রাস্তা ব্যবহার করেন। তবে গত শনিবার মাদরাসা কমিটি বিনা নোটিশে রাস্তাটি দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছে। এতে মাদরাসার পেছনে বসবাসকারী গ্রামবাসী গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, গ্রামবাসীর ব্যবহৃত এই রাস্তাটিতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে জাইকা প্রজেক্টের অধীনে ইট বসায় পানছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ। ইট বসানোর সময় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ রাস্তা চলাচলে বাধা দিলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌখিকভাবে গ্রামবাসীকে রাস্তা চলাচলের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে গ্রামবাসী শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছে। পরবর্তীতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসা কমিটি ১০ ফিট প্রশস্ত রাস্তাটি ৫ ফুট ছোট করে দেয়।
সর্বশেষ শনিবার মাদরাসা কমিটি রাস্তার উপর দেয়াল তুলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
কলাবাগান গ্রামের বাসিন্দা ও পানছড়ি ইসলামি সিনিয়র মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা নুরুল আমিন বলেন, আমি উক্ত মাদরাসার শিক্ষক। আমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে রাস্তা বন্ধ না করার জন্য বারবার অনুরোধ করেছি। তবে তারা আমার কথা শোনেনি। আমি মাদরাসা কমিটির সভাপতির বাড়িতে বেশ কয়েকবার গিয়ে অনুরোধ করেছি যাতে ছোট করে হলেও রাস্তাটি রাখে। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেননি। আমরা এখন কীভাবে চলাচল করবো জানি না।
গ্রামের বয়োবৃদ্ধ রাবেয়া খাতুন (৭৩) বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার শ্বশুর, স্বামী, সন্তানরা এ রাস্তা ব্যবহার করেছে। আমার ৬ সন্তানকে এই মাদরাসায় পড়িয়েছি। আমার ছোট সন্তান এ মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিমে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে। আর আজকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি বন্ধ করে দিলো। এই জুলুম থেকে বাঁচতে আমরা ইউএনও অফিসে দরখাস্ত দিতে যাচ্ছি। রাস্তা খুলে না দিলে আমরণ অনশন করবো।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদির বলেন, জন্মের পর থেকে এ রাস্তা দিয়ে আমরা চলাচল করেছি। আমাদের বাপ দাদারাও চলাচল করেছে। কিন্তু গতকাল কোনো নোটিশ ছাড়া রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। জন্মের পর এলাকায় এমন অন্যায় দেখিনি। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো। তবে এই বিষয়ে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম বলেন, রাস্তাটি একান্ত মাদরাসার। আমরা মাদরাসার প্রয়োজনেই এটি বন্ধ করেছি। গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য পূর্বদিকে তো আরেকটা রাস্তা আছে। ইউএনও মহোদয়ও এই বিষয় অবগত আছেন।
পানছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। আপাতত কাজ বন্ধ করার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে বলেছি। পরবর্তীতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।