খোলামেলা কথাদ্বিতীয় রিপাবলিক মানে কি

একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

অনেকে দ্বিতীয় রিপাবলিক গঠন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন এবং জানতে চেয়েছেন এটা আবার কী? যাঁরা এমনটি ভাবছেন, তাঁদেরকে বিনীতভাবে বলবো, দয়া করে ফ্রান্সের ইতিহাস পড়ুন। তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ফ্রান্সে এখন পঞ্চম  রিপাবলিক পিরিয়ড চলমান। বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা যাক-

১. ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ফ্রান্স ছিলো রাজ শাসনের রাষ্ট্র। ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সংঘটিত হয় ফরাসি বিপ্লব। বিপ্লবে আম জনতা বিজয় লাভ করে। ফলে রাজশাসন নির্বাসিত হয়। বিপ্লব চলমান থাকা অবস্থায় ১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সকে প্রথম রিপাবলিক বা জনতার শাসনের রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে এ পর্ব বেশি  দিন স্থায়ী হয় নি। প্রথম রিপাবলিকের মেয়াদ ছিলো ১৭৯২ থেকে ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দ।  

২. ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশটি আবার স্বৈরতান্ত্রিক রাজ শাসনের কবলে পড়ে। দেশটিতে ১৮০৪ থেকে ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এক অস্থিতিশীল রাজতন্ত্র ঘুরপাক খেতে থাকে।

১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশটি স্বৈরশাসনের রাহুমুক্ত হয়।

১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশটিকে দ্বিতীয় রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা  করা  হয়। এ পর্ব  স্থায়ী হয় ১৮৪৮ থেকে ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। 

১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে দেশটি আবার স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে। স্বৈরশাসনের এ পর্ব  ১৮৫২ থেকে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত  চলে। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে দেশটিতে স্বৈর শাসনের পতন ঘটে। 
৩. ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে দেশটিকে তৃতীয় রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ পর্ব  চলে ১৮৭০ থেকে ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।  

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানি ফ্রান্স দখল করে। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেশটি জার্মানির দখলে থাকে। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির দখলমুক্ত হয়। তবে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেশটি শাসন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের  চেয়ারম্যান ছিলেন জেনারেল  দ্যাগল। তিনি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।

৪. ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সকে চতুর্থ রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ পর্ব  ১৯৫৮ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের  আশংকা  দেখা  দেয়। 

দেশকে গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচাতে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে জেনারেল  দ্যাগল আবার শাসনভার গ্রহণ করেন। এ পর্বের সূচনাতে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সকে পঞ্চম রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জেনারেল দ্যাগল ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় ছিলেন। তার হাত ধরে নবযাত্রা শুরু করা ফ্রান্সে এখন পঞ্চম রিপাবলিক পিরিয়ড চলমান। দেশটি এখন পৃথিবীর অন্যতম সেরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গুলোর  একটি। ফ্রান্স এখন পৃথিবীর অন্যতম সেরা কল্যাণ রাষ্ট্র। 

নতুন রিপাবলিক ঘোষণার মানে হলো, অতীতের জরাজীর্ণ রাষ্ট্র কাঠামোকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন স্বপ্ন ও শপথ নিয়ে যাত্রা শুরু করা এবং রাষ্ট্রকে নতুনভাবে সাজানো।
আরো জানার জন্য আমার লেখা বই ‘চেনা অচেনা ইউরোপ’ পড়তে পারেন। বইটির প্রকাশক মুক্ত চিন্তা।

লেখক : সাবেক সচিব, লেখক ও গবেষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029799938201904