ধ*র্ষক প্রধান শিক্ষকের জামিন, শর্ত এক একর জমি লিখে দেয়া

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ধর্ষনের শিকার নারীকে এক একর জমি লিখে দেয়ার শর্তে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রহিমকে (৪৬) তিন মাসের জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে ভিকটিমকে এই এক একর জমি হস্তান্তর করতে বলেছেন আদালত। 

ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাঙামাটির লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি আর এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমের আবেদনের শুনানি শেষে গত ১ জুন বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে আদেশ যাতে পুনর্বিবেচনা করা যায় সেজন্য বিষয়টি ১৫ দিন পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়। এবং ১৫ জুন মামলাটি পুনরায় কার্যতালিকায় আসে।

এরপর অধস্তন আদালতের প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর গত ২১ জুন আসামি আব্দুর রহিম রাঙামাটির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে জামিনের বিষয়টি সম্প্রতি জানা গেছে।

ওই দিন আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ রেজাউল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।

আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, আদালত এক একর জমি লিখে দেয়ার শর্তে আসামিকে (আব্দুর রহিম) জামিন দিয়েছেন। এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই জমি ভিকটিমের পরিবারের অনুকূলে হস্তান্তর না করলে আমরা আসামির জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করব।

হাইকোর্টের লিখিত আদেশে দুই পক্ষের জামিন শুনানির প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আপিলকারীর (আব্দুর রহিম) আইনজীবী মোহাম্মদ রেজাউল করিম দাবি করেছেন যে, আপিলকারী (আব্দুর রহিম) ইতোমধ্যে মামলার ভিকটিমকে বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এবং তার মায়ের একটি হলফনামা আদালতে দাখিল করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম। এতে বলা হয়েছে, ভিকটিম আসামিকে বিয়ে করেছেন এবং তিনি (ভিকটিম) যেকোনো শর্তে আসামির জামিন চান।

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বলেছেন, ভিকটিম একটি ভিন্ন ধর্ম ও জাতিসত্তার মেয়ে এবং ভিকটিমের মা একজন দরিদ্র নারী। এই বিয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং জামিন পাওয়ার পর ভিকটিমকে আসামির বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হতে পারে। এজন্য ভুক্তভোগীর ভবিষ্যতের জন্য কিছু আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আবেদনকারীকে (আসামিকে) বলা যেতে পারে।

এই পর্যায়ে বিষয়টির ওপর শুনানি স্থগিত রাখা হয়।

পরে আসামির পক্ষের আইনজীবী আদালতে একটি সম্পূরক হলফনামা দাখিল করেন। এতে বলা হয়, জামিন পাওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে আপিলকারী (আসামি) নিবন্ধিত দলিলের মাধ্যমে ভিকটিমকে এক একর জমি হস্তান্তর করবেন। এবং তিনি যদি তা পালন করতে ব্যর্থ হন তবে তিনি আর জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করবেন না।

আদালত আদেশে বলেন, মামলার তথ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের আইনজীবীদের দাখিল করা অঙ্গীকারনামার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আব্দুর রহিমকে তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিচ্ছি। জামিনের শর্ত, আপিলকারী আব্দুর রহিম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে উপরে বর্ণিত হিসাবে (জমি হস্তান্তর সম্পন্ন করে) একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেবেন। আপিলকারী আসামি উপরোক্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির লংগদু উপজেলার করল্যাছড়িতে এক স্কুলছাত্রী (১৬) ছাগল খুঁজতে বের হলে সেখানকার আর এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রহিম তাকে লেবু দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে স্কুলের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে। সে সময়ে স্কুলের ছাত্রাবাসে কেউ ছিল না। বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দিতে থাকেন ওই শিক্ষক। পরবর্তীতে ঘটনার ৯ দিন পর ৫ অক্টোবর স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে লংগদু থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়।

এই মামলায় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ নভেম্বর আব্দুর রহিমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে রাঙামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ ই এম ইসমাইল হোসেন রায় দেন। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামি আব্দুর রহিম। পাশাপাশি তিনি জামিন চেয়েও আবেদন করেন। এরপর গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতার দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতার দাবি শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে ‘রাজাকার’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha ‘রাজাকার’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ উচ্চশিক্ষায় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ - dainik shiksha উচ্চশিক্ষায় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003026008605957