নগদ-এ উপবৃত্তি দিচ্ছে স্বস্তি, নিশ্চিত করছে পড়াশোনা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ঢাকায় এক বাড়ির কেয়ারটেকার বরিশালের সমীর সরকার। সকালে উঠে গাড়ি বের হওয়ার জন্য গেট খুলে দেওয়া, লিফট চালু করা, পানির পাম্প চালু করা, অনেকরকম ব্যস্ততা। এরই ফাঁকে তিনি ছেলের হাত ধরে স্কুলে ছোটেন। 

দুবছর আগেও ছেলেকে নিয়ে স্কুলে ছোটার এতো তাড়া ছিলো না সমীরের। ইদানিং তাহলে এতো নিয়মিত কেনো স্কুলে?

প্রশ্নটা শুনে একটু থমকান সমীর। ম্লান হেসে বলেন, স্কুলে দেলে তো একটা খরচ আছেই। আগে মনে হইত স্কুলে না দিয়া বাসায় রাখলে কাজের একটু উপকার হইবে। কিন্তু এহন তো সরকার উপবৃত্তি দেতেআছে। বিশেষ কইরা নগদ টাকা দেওন শুরু করার পর থেইকা তো আর কোনো সমস্যাই নাই। তাই স্কুল কামাই করাই না।

সারাদেশেই এই এক চিত্র এখন। সরকারের উপবৃত্তি বিতরণ বদলে দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র। শিশুদের জন্য এক দারুন প্রেরণা হয়ে এসেছে উপবৃত্তি। শিক্ষক, অভিভাবকরা বলছেন, এই উপবৃত্তির কল্যাণেই আবার জমজমাট হয়ে উঠেছে স্কুলগুলো। আর সে জন্য তারা বড় ধন্যবাদ দিচ্ছেন নগদকে। 

সরকার অনেকদিন ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের উপবৃত্তি দিচ্ছে। কিন্তু শুরুতে সেখানে ছিলো ভীষণ নৈরাজ্য। যে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ করা হতো, তাদের ছিলো না স্বচ্ছতা। একই সাথে হাতের কাছে তাদের এজেন্টও না থাকায় টাকা বের করতে জটিলতায় পড়তেন অভিভাবকরা। 

এসব সমস্যা সমাধানে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদ-এর সাথে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তারপর থেকেই মিলছে উপবৃত্তির সুফল। এই সাফল্যের কারণেই আবারও নগদ-এর সাথে উপবৃত্তি বিতরণের জন্য চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এই সিদ্ধান্তে দারুন খুশি অভিভাবক ও শিক্ষকরা। বরিশালেরই ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদা আখতার বলছিলেন, এই উপবৃত্তি নিয়মিত পাওয়ার ফলে স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, কোনো রকম জটিলতা ছাড়াই সব শিক্ষার্থীকে ভাতা পেতে দেখছি। এর আগে নিয়মিত ভাতা না পাওয়ায় একটা সময় ঝরে পড়ার হার বাড়ছিল। কিন্তু নগদ-কে দায়িত্ব দেওয়ার পর স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অনেক বেড়েছে।

মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস নগদ শিশুদের অভিভাবকের কাছে উপবৃত্তি পৌছে দেওয়ার কাজটা করছে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে। সব শিক্ষার্থীর নাম, জন্ম নিবন্ধন সনদসহ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল নম্বর নিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করেছে নগদ। ফলে এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ভুয়া সুবিধাভোগীর নাম।

নগদ কেবল শিক্ষার্থীদের দিকটা দেখছে তা নয়, তাদের এই কাজে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয়ও হচ্ছে। এর আগে ভিন্ন একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করতো সরকার। তখন প্রতি হাজার টাকার উপবৃত্তি বিতরণ করতে সরকারের কাছ থেকে সাড়ে ২১ টাকা করে সার্ভিস চার্জ এবং ক্যাশ-আউট চার্জ নিত শিওর ক্যাশ। সেখানে ‘নগদ সব মিলিয়ে নিচ্ছে হাজারে মাত্র সাত টাকা। সুবিধাভোগী মূল টাকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাশ-আউটের খরচও পেয়ে যাচ্ছেন, ফলে গ্রাহককে বাড়তি কোনো অর্থ খরচ করত হচ্ছে না। শুধু ভাতা বিতরণে এই প্রক্রিয়ায় সরকারের অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ - dainik shiksha ১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029778480529785