নতুন এমপিও নীতিমালা: একটি পর্যালোচনা

ড. মো. এমদাদুল ইসলাম |

দেশের শিক্ষার প্রায় ৯৭ শতাংশ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়ে থাকে। বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত হয় এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর মাধ্যমে। সম্প্রতি স্কুল-কলেজের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে অনেকগুলো ভাল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যা প্রশংসণীয়। যেমন, গ্রন্থাগার শিক্ষক-প্রভাষক পদ সৃষ্টি, আট বছরের অভিজ্ঞতায় প্রভাষকদের মধ্য থেকে ৫০ শতাংশকে সহকারী অধ্যাপক বা জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি এবং ১৬ বছরের অভিজ্ঞতায় সব প্রভাষকদের পদোন্নতি দেয়া বিধান, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন সূচক নির্ধারণ। জ্যেষ্ঠতা, একাডেমিক ফল, সৃজনশীল কর্ম, ভার্চুয়াল ক্লাসের দক্ষতা, উচ্চতর ডিগ্রি (এমফিল ও পিএইচডি), গবেষণা প্রবন্ধ ইত্যাদি বিবেচনায় মূল্যায়ন সূচকের ১০০ নম্বর নির্ধারণ করা শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।

নতুন নীতিমালায় অনেকভালো দিক থাকলেও এতে নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালায়  সহযোগী অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিধান থাকলেও এই নীতিমালায় তা নেই। অথচ মহান জাতীয় সংসদে অনুমোদন হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ বেসরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করে তা বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। স্নাতক(পাস) কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠির মধ্য রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বা উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ শিক্ষকতার ১৫ বৎসরের অভিজ্ঞতা। অথচ স্নাতক কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ড গঠন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বা উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগের অনুমোদন দেয়না। ফলে স্নাতক কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে জটিলতা সৃষ্টি হবে।

নিয়োগ জটিলতার সুযোগে নতুন নীতিমালা ২০২১ এর ১১.১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি কলেজের শিক্ষক বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ নেয়ার সুযোগ নেবেন। ফলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন ব্যহত হবে। মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় কামিল (স্নাতকোত্তর) এবং ফাযিল (স্নাতক) মাদরাসার অধ্যক্ষ নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠির মধ্যে একটি হল সহকারী অধ্যাপক হিসাবে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ শিক্ষকতার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা। একই সাথে উল্লেখ রয়েছে এমফিল ডিগ্রি থাকলে ২ বছরের অভিজ্ঞতা ও পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে ৪ বৎসরের অভিজ্ঞতা শিথিল যোগ্য। 

স্নাতক কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার এই মাপকাঠি রাখা হয়নি। এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি মাদরাসার ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্বের, কলেজের ক্ষেত্রেও কম গুরুত্বের নয়। কাজেই অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে মাদরাসার অনুরূপ যোগ্যতা রাখাই যুক্তিসংগত হত। আবার ৮ বছরে পদোন্নতিবঞ্চিত কারিগরি শিক্ষার প্রভাষকরা ১৬ বছরে পাবেন ৭ গ্রেড, পক্ষান্তরে পদোন্নতি বঞ্চিত কলেজের প্রভাষকরা ১৬ বৎসরে পাবেন ৬ গ্রেড। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন নীতিমালা থাকা আবশ্যক। এ ব্যপারে কতৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন এটাই জাতির প্রত্যাশা ।

লেখত : ড. মো. এমদাদুল ইসলাম, সভাপতি, এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রিধারী বেসরকারি শিক্ষক সমিতি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028500556945801