নতুন নিয়োগেও কাটবে না শিক্ষক সংকট

রুম্মান তূর্য |

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত নতুন শিক্ষকরা নিয়োগ সুপারিশ পেয়ে যোগদান করলেও দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট কাটছে না। এ ধাপে ২৫ হাজারের মতো শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশ পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে দেশের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য আছে ৬৮ হাজারের বেশি পদ। তাই নতুন শিক্ষকরা যোগদান করলেও ৪০ হাজারের বেশি এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে। তার সঙ্গে গত অক্টোবর থেকে অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হয়ে পড়া পদগুলো যোগ করলে ওই সংখ্যা আরো বাড়বে। তাই শিক্ষক সংকটে ক্লাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

এদিকে সহসা শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা না থাকায় এসব শিক্ষক পদ কতদিন শূন্য থাকবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।  কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬৮ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়োগে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নিয়োগ সুপারিশের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩২ হাজারের বেশি প্রার্থী। তবে, যোগদানের প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ভি-রোল ফরম পূরণ করে তা অনলাইনে জমা দিয়েছেন ২৮ হাজারের বেশি। এদিকে নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের আগে তাদের সনদ যাচাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকায় বহু প্রার্থী বাদ পড়ছেন। শেষ তক ২৫ থেকে ২৬ হাজার প্রার্থী চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাতে ৪০ হাজারের বেশি পদ শূন্যই থেকে যাবে।
 
কেনো এতো শিক্ষক পদ শূন্যই থাকছে-এমন প্রশ্নের জবাবে এনটিআরসিএ সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিবন্ধিত চাকরি না পাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা শূন্যপদের চেয়ে কম। চারুকলা বিষয়ের (২০১০ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষা নীতিতে বাধ্যতামূলক হওয়া) সহকারী শিক্ষক পদে প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কুল পর্যায়-২ এর শূন্য পদগুলোর জন্যও পর্যাপ্ত প্রার্থী নেই। অপরদিকে আইসিটি বিষয়ে নিবন্ধিত প্রার্থী থাকলেও বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী তাদের অনেকেই যোগ্য নন। ছয় মাসের ডিপ্লোমা নিয়ে তারা নিবন্ধিত। মাদরাসার আরবি বিষয়গুলোতেও আছে প্রার্থী সংকট। তাই ওই পদগুলো পূরণ করতে পারেনি এনটিআরসিএ। এ কারণে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও সম্ভাবনা নেই। 
জানা গেছে, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে আগস্ট মাসের শুরুতে। এরপর প্রার্থীদের ভাইভা নেয়ার জন্য প্রায় দুই মাস সময় প্রয়োজন হবে। চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই শেষে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিকল্পনা আছে। ফলে দীর্ঘ সময় এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষক পদ শূন্যই থাকছে।  
এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নির্বাচিত প্রার্থীদের ভি-রোল ফরম ও সনদ আমরা যাচাই করছি। এরপর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে। অনুমতি পাওয়ার পর প্রার্থীরা চূড়ান্ত সুপারিশ পাবেন।  
 
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চরম শিক্ষক সংকটে ক্লাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানীর বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বাবুল দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বহু শিক্ষক পদ শূন্য। এ পদগুলো আরো দীর্ঘ সময় শূন্য থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে না। আবার নতুন  শিক্ষকরা সুপারিশ পেলেও অনেকে যোগদান করবেন না। ফলে আরো পদ শূন্য হবে। তাই সরকারের এখনই উচিত এ সংকট কাটাতে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে বের করা। 
 
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মাছুম বিল্লাহ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ সংকটের প্রভার সরাসরি পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর। তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার মতো হবে না। আর যার প্রভাব পড়বে দেশের ভবিষ্যতে। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025100708007812