নতুন বই পাননি দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পাওয়ার পরেও প্রকল্প পাশের জটিলতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে সারা দেশের দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এখনো নতুন বই পাননি। নতুন বছরের ১৮ দিন পরেও এসব মাদরাসায় পড়ুয়া শিশুদের হাতে পৌঁছেনি নতুন বই। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিন থেকে কিছু কিছু দারুল আরকাম মাদরাসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের চেষ্টায় কিছু কিছু মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেলেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে নির্দেশনা না দেয়ায় অনেক দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বই পাননি। শিক্ষকরা শত চেষ্টা করেও ২০২২ শিক্ষাবর্ষের নতুন বই সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী নতুন বইয়ের জন্য এখনও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারি থেকে দীর্ঘ দুই বছর বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ২ হাজার ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এরই মধ্যে মারা গিয়েছেন ৫ জন শিক্ষক। শিক্ষকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের গত ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মুজিব শতবর্ষে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দারুল আরকাম মাদরাসা প্রকল্পটিকে সরকারের অবদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন বলে পরিষ্কার জানিয়েছেন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও ওয়াকফ বিষয়ক কমিটির সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৫ হাজার টাকা হারে অনুদান দেন। এসময় দারুল আরকাম মাদরাসা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু উল্লেখিত প্রকল্পটি অদ্যাবধি আলোর মুখ দেখেনি।

শিক্ষকরা বলছেন, গত দু’বছরে বেতন ভাতা না পাওয়ায় ৫ জন শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিবার-পরিজনও প্রকল্প পাস না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। এদিকে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন হওয়ার অজুহাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মজীবীদের এমন দুরবস্থা দেখে খোদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনেই ইসলামিক আদর্শের অভাব অনুভব করছেন সচেতন মহল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশের প্রতিটি উপজেলায় দুইটি করে একযোগে ১ হাজার ১০টি দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এতে জেনারেল ও আরবি ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষার যুগোপযোগী সমন্বয়ে পাঠদানের মাধ্যমে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে দেশব্যাপী যথেষ্ট সুনাম অর্জন করে প্রকল্পটি। ইসলামের সর্বপ্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামানুসারে এটির নাম দেয়া হয় ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসা’। প্রতিটি মাদরাসার সাইনবোর্ডে ‘প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ লেখা রয়েছে। দারুল আরকাম মাদরাসাগুলো মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হলেও পরবর্তীতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে আলাদা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা বলে গণশিক্ষা প্রকল্প থেকে এটিকে আলাদা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার চন্দ্রাখালি দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার ভূমিদাতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওহাব বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এলাকায় উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারের আশা নিয়ে নিজে ১০ কাঠা জমি দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা খরচ করে অবকাঠামোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মাত্র দুই বছর শেষে প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পটি পাস না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ঋণগ্রস্ত হয়ে আর্থিক অনটনে রয়েছেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। তিনি দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা শীর্ষক প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বকেয়া বেতনভাতা প্রদান ও অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেয়ার দাবি জানান। তিনি মাদরাসারগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

চট্টগ্রাম লোহাগাড়া পূর্ব কলাউজান মাসুদা খাতুন দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার ভূমিদাতা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ আইনবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমরা ৫ শতাংশ জমি দিয়ে ও নিজস্ব অর্থায়নে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় অবকাঠামো নির্মাণ করে মাদরাসায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে দারুল আরকাম মাদরাসাকে মূল প্রকল্প থেকে আলাদা করে ভূমিদাতা, এলাকাবাসী, লক্ষাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হয়রানি করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে প্রকল্পটি অদ্যাবধি পাস না হওয়ায় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। স্থায়ী অবকাঠামোসহ ১ হাজার ১০টি প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ একটি শিক্ষা প্রকল্প শুধু দুই বছরের জন্য প্রতিষ্ঠার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি ইসলামি শিক্ষা খাতে সরকারের এই অবদানকে স্থায়িত্ব দিতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027837753295898