অন্যান্য বছরের মতো এবারও বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে আনন্দে মেতেছেন দেশের পৌনে চার কোটি শিক্ষার্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে শোভা পেয়েছে নতুন বই। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পূর্ণ করেছে নতুন শ্রেণিতে ওঠার আনন্দ। বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিকে পর্যায়ের ২ কোটি ১২ লাখ শিশুর হাতে সব বিষয়ের বই তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ের নতুন বই পেলেও অষ্টম ও নবম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি।
সোমবার বছরের প্রথম দিনে দেশের বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই বিতরণ উৎসব শুরু হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকেল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বই উৎসবের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কয়েকহাজার খুদে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে। সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
অনুষ্ঠানে রাজধানীর ২১টি স্কুলের প্রায় তিন হাজার খুদে শিক্ষার্থী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। নতুন বই হাতে তারা মেতেছেন উচ্ছাসে। নতুন শ্রেণির নতুন বই হাতে পেয়েই বাধভাঙে শিশুসুলভ কৌতুহলের। উৎসব প্রাঙ্গণেই নতুন বই নেড়েচেড়ে দেখেন শিশুরা।
উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো। এতে ছোট শিশুরা গান, নৃত্য পরিবেশন করে বই বিতরণ উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় বই উৎসব হলেও নির্বাচন কমিশন অনুমোদন না দেয়ায় এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মাধ্যমিকের কেন্দ্রীয় বই উৎসবের আয়োজন করা হয়নি। তবে সরকারের রুটিন কাজ হিসেবে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকা (টিজি) বিতরণ করা হচ্ছে। সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির ২ কোটি ১২ লাখ খুদে শিক্ষার্থীর মাঝে ৯ কোটি ৩৮ লাখ কপি বই বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ শিক্ষার্থী পাচ্ছেন ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭ পাঠ্যবই। মাদরাসার ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জনের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২টি পাঠ্যবই। এ ছাড়া ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ শিক্ষার্থী ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭টি, কারিগরিতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৪ শিক্ষার্থী ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২টি, এসএসসি ভোকেশনালের শিক্ষার্থীরা পাবেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৫ পাঠ্যবই এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে ৭২৮টি বই। শিক্ষকদের জন্য সহায়িকা দেয়া হবে ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি।
এনসিটিবি সূত্র বলছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির সব বই ছাপা হলেও মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণির সব বই ছাপা হয়নি। অষ্টম শ্রেণির প্রায় ৯০ শতাংশ ও নবম শ্রেণির ৮৫ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে। ফলে এ দুই শ্রেণির নতুন শিক্ষার্থীদের সবাই বছরের প্রথম দিনে সব বিষয়ের বই পাননি। নবমের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অনুশীলনী পাঠ ও অনুসন্ধানী পাঠ এবং অষ্টমের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অনুশীলনী পাঠ ও অনুসন্ধানী পাঠ ছাপা শেষ হয়নি। তাই কিছু কিছু শিক্ষার্থীকে ছয় থেকে আটটি বই হাতেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। তবে বছরের প্রথম দিন খালি হাতে বাড়ি যাননি কোনো শিক্ষার্থী।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণির একাধিক বিষয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় চলে যায়। এ জন্য এ দুই শ্রেণির কিছু বই ছাপার কাজ শেষ হয়নি। তবে এই দুই শ্রেণির অধিকাংশ বই ছাপিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আর প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ বই ছাপিয়ে পাঠানো হয়েছে। ফলে বছরের প্রথম দিনেই সব শিক্ষার্থী বই পাবে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও প্রথম দিনে ছয় থেকে আটটি করে বই পাবে। এই দুই শ্রেণির সব শিক্ষার্থী সব বিষয়ের বই আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যেই হাতে পেয়ে যাবেন।