নতুন বছরে পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে শঙ্কা, সংশয়ে এনসিটিবি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে কাজ শুরু হয়েছে জোরেশোরেই। আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। তাই বইয়ের কাজও এগিয়ে এনেছে সরকার। বই ছাপাকাজে অগ্রগতি সন্তোষজনক হলেও বইয়ের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। কারণ ছাপাখানাগুলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দেওয়া প্রাক্কলিত দর থেকে অনেক কম দামে কাজ নিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই দর ৩৫ শতাংশেরও কম। কম দরে কাজ নিয়ে ছাপাখানাগুলো মানসম্মত বই দেবে কীভাবে তা নিয়ে সংশয়ে এনসিটিবি সংশ্লিষ্টরাও। কারণ গত কয়েক বছর ধরেই ছাপাখানাগুলোর মানহীন বই সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। খোদ এনসিটিবি চেয়ারম্যানও বলেছেন, আমরা বইয়ের দামে ঠকিনি কিন্তু মানে ঠকছি। রোববার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান।

  

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত বই ছাপাকাজের টেন্ডার শেষ করে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) দেওয়া হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির নোয়া দেওয়া হবে শিগগিরই। অষ্টম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার শেষ করে নোয়া দেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী- নভেম্বরের মধ্যেই ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের বইয়ের ছাপাকাজ শেষ করতে চায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে প্রায় ৩৫ কোটি নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবে সরকার।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়ের ছাপাকাজ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। নবম শ্রেণির বই লেখার কাজ শেষ হলেও ডিজাইন এবং পান্ডুলিপি চূড়ান্ত হয়নি। বইয়ে ভুলভ্রান্তি ও স্পর্শকাতর তথ্য এড়াতে অধিকতর যাচাই-বাছাই চলছে। তাই এই শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার কাজ কবে শেষ হবে আর কবে ছাপা শুরু হবে তা জানাতে পারেনি এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ। আগামী বছরে প্রতি শিক্ষার্থীর হাতে ‘কিশোর মুজিব’ নামে একটি বই দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে এনসিটিবি। আর এই বই বাবদ সরকারের ব্যয় হবে ৬৮ কোটি টাকা।

তথ্যমতে, কাগজের চলমান দাম অনুযায়ী দর নির্ধারণ করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপার ক্ষেত্রে টেন্ডারে প্রতি ফর্মায় এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ দর দিয়েছিল ৩ টাকা ১০ পয়সা। কিন্তু ছাপাখানাগুলো সর্বনিম্ন দর ২ টাকা ২০ পয়সা দরে এই কাজ নিয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার ক্ষেত্রে এনসিটিবি প্রতি ফর্মায় দর দিয়েছিল ৩ টাকা ১০ পয়সা। ছাপা প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ২ টাকায় এই কাজ নিয়েছে। আর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ছাপার টেন্ডারে এনসিটিবি টেন্ডার দিয়েছিল ৩ টাকা দরে। কিন্তু মূদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ১ টাকা ৭০ পয়সায় কাজ নিয়েছে। অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার দরপত্র মূল্যায়ন কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। অষ্টমের বই ছাপার প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত ব্যয় ২ টাকা ৬৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বই ছাপার কাজও ফর্মা প্রতি ব্যয় ২ টাকার কমে ছাপাখানা মালিকরা কাজ নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

কম দরে কাজ নিয়ে মানসম্মত বই পাওয়া যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ষষ্ঠ শ্রেণির বই ছাপার কাজ পাওয়া ব্রাইট প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী এস এম মহসিন প্রতিবেদককে বলেন, মানসম্মত বই পেতে এনসিটিবিকে যথাযথ মনিটরিং করতে হবে।

প্রাথমিকের বইয়ের ছাপাকাজ পাওয়া অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী কাওসার-উজ-জামান রুবেল বলেন, এবার অনেকেই কম দরে কাজ নিয়েছে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ব্রাইটনেস কিছুটা কমিয়ে দেওয়ায় দরও কিছুটা কমে গেছে।

এই দরেও শতভাগ মানসম্মত বই দেব দাবি করে রুবেল বলেন, এনসিটিবি কঠোরভাবে মানের ব্যাপারে মনিটরিং করলে সব ছাপাখানার কাছে মানসম্মত বই নেওয়া সম্ভব।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, যথাযথ দর দিয়েই বই ছাপাতে চাই। কিন্তু বইয়ে যে মানের কাগজ চাই, তা পাই না। কারণ ছাপাখানাগুলো অতি প্রতিযোগিতার কারণে নিম্নদরে কাজ নিচ্ছে। এর ফলে আমরা দামে ঠকছি না, কিন্তু বইয়ের মানে ঠকে যাচ্ছি।

চেয়ারম্যান বলেন, এনসিটিবির পক্ষ থেকে যথাযথ মনিটরিং করা হবে যেন মানহীন কোনো বই না আসে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044238567352295