দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) জেলায়-জেলায় মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষক সংগঠনটি। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা করতে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তকঃ বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সেমিনারের আয়োজন করেছিলো সংগঠনটি।
ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নাছির উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনেই। সেমিনারে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে আগামী ২৫ জানুয়ারি সব জেলা ও মহানগরে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতীয় শিক্ষক ফোরামের নেতারা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, এ সেমিনার ঘুমন্ত জাতিকে জাগ্রত করেছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা মুসলমান। নির্বাচনের আগে তিনি দাবি করেছিলেন ক্ষমতায় আসলে ইসলাম বিরোধী কিছু করা হবে না। কিন্তু তারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। মুসলমানদের মুসলিম কৃষ্টি কালচার ও নিয়ম মানতে হবে। নতুন শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে মুসলমান সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষা ভুলিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগণ নেই। ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে জনগণ সরকারকে লালকার্ড দেখিয়েছে। শিক্ষা কারিকুলামে ইসলামী শিক্ষা না থাকলে আমরা জান দিয়ে তা প্রতিরোধ করবো। এ শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে দেশ ও সমাজ গঠন করা তো দূরের কথা পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস হবে। এতে শান্তি আসবে না। এই শিক্ষা কারিকুলাম শিক্ষক ও অভিভাবকরা মানেন না, প্রত্যাখ্যান করলাম। আমাদেরকে পরগাছা করার আয়োজন চলছে।
তিনি বলেন, নতুন যে শিক্ষাক্রম আমাদের সন্তানদের মধ্যে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, এ পাঠ্যসূচি মুসলমানদের মুসলমানিত্ব ভুলে যাওয়ার একটি করিকুলাম। নতুন যে কারিকুলাম দিয়েছেন, এর মাধ্যমে কী জাতি গঠন করতে চান? নতুন যে কারিকুলাম এর মাধ্যমে দেশ গঠনতো দূরের কথা, সমাজ গঠনতো দূরের কথা, ওই বিদেশিদের যে কালচার রয়েছে-পশুদের মতো কিছুদিন পরে পিতৃপরিচয় দেয় না, মাকে পরিচয় দেয় না.........। আল্লাহ যে বলেছেন পশুর চেয়েও খারাপ, তার বাস্তবতা হলো নতুন যে নিয়মটা চালু করতে যাচ্ছে তাতে আমি মনে করলেই আমি ছেলে, মনে করলেই আমি মেয়ে, সমকামীতা......নাউজুবিল্লাহ। বিভিন্ন দেশ থেকে এটাকে বাদ দেয়া হয়েছে। আপনারা কখনো দেখেছেন পশু, বলদ বলদ কখনো মেলামেশা করে? এর মাধ্যমে কোনোদিন শান্তি আসতে পারে? এসময় তিনি নতুন কারিকুলামকে প্রত্যাখ্যান করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চরমোনাই আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষসৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ৯২ শতাংশ মুসলমানদের দেশে ঈমান, ইসলাম, শিক্ষা ব্যবস্থা তুলে দিতে চায়। এই সরকার হিন্দুত্ববাদী সরকার। রাজনীতি ও ক্ষমতার জন্য সে ইসলামের কথা বলে। এই পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ বসে থাকবে না। সেকুলারিজম বিশ্বাস করলে মুসলমান থাকতে পারে না। শিক্ষামন্ত্রী ইসকনের সদস্য। তাকে শেখ হাসিনা বানিয়েছেন কী-না, সন্দেহ ইন্ডিয়া তাকে শিক্ষামন্ত্রী বানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরে বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত হলেও তিনি জানেন না বলা হচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, বর্তমান কারিকুলাম দেখে মনে হয় তারা মানুষকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বানাতে চায়। সমকামিতা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কি এদেশের মানুষকে ধর্মান্তরিত করার ঠিকাদারি নিয়েছেন? নাকি আপনার কোন লোক এই ঠিকাদারি নিয়েছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল প্রভাষক আবদুস সবুর। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইয়াকুব হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম, লেখক গবেষক ও কলামিস্ট মুসা আল হাফিজ, শিক্ষক ও গবেষক ড. সরোয়ার হোসেন, ফিলোসফির শিক্ষক আসিফ মাহতাব, সাংবাদিক নেতা মুন্সী আবদুল মান্নান, সৌদি আরবের প্রিন্স ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. হাফেজ মাবরুক বিল্লাহ, মাহমুদুল হাসান রায়হান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মোস্তফা মনজু, আহমদ আবদুল কাইয়ুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ বি এম জাকারিয়া,ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল বশর আজিজী, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবিরসহ অনেকে সেমিনারে অংশ নেন।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইয়াকুব হোসেন বলেন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শিক্ষানীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা আনার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমরা তা দেইনি। পীর সাহেব চরমোনাইকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আজকেরই আন্দোলনের খসড়া কর্মসূচি দিন। আমি ৩৭টি শিক্ষা কমিশন পড়েছি কিন্তু আলোর মুখ দেখেছে ২০১০ এ। সাধারণ ও মাদরাসা শিক্ষকদের সমন্বয়ে শিক্ষা কমিশন ও শক্তিশালী কারিকুলাম কমিটি করে দিন।