নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে যুক্ত হচ্ছে ‘লিখিত পরীক্ষা’

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন-পদ্ধতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসছে সরকার। সামষ্টিক মূল্যায়নে যুক্ত করা হচ্ছে ‘লিখিত পরীক্ষা’। একটি নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষায় বসবে শিক্ষার্থীরা। তবে এই পরীক্ষা বর্তমানে প্রচলিত প্রথাগত পরীক্ষার মতো হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সামষ্টিক মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা যুক্ত করার পাশাপাশি ‘নৈপুণ্য’ অ্যাপের মাধ্যমে তৈরি রিপোর্ট কার্ডের ভাষা ও মাঠপর্যায়ে পাঠানো নির্দেশনাগুলো আরও সহজ করা হবে, যাতে তা সবার কাছে বোধগম্য হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে। 

নতুন শিক্ষাক্রম গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে একাদশ এবং ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে বর্তমানে দুই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হয়। এর একটি বছরজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন মূল্যায়ন, অন্যটি বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। এ তিন শ্রেণিতে হবে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে। দশম শ্রেণি শেষে ওই শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর পাবলিক পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর প্রতিটি বর্ষ শেষে একটি করে পরীক্ষা হবে। এসব পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমের এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট দিনে কোনো লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে না।

এ বিষয়ে একাধিক অভিভাবক বলেন, মূল্যায়নে ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বা ইন্ডিকেটর বাতিল করা উচিত। একই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট দিনে নম্বরভিত্তিক লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তাঁদের। যাতে পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়।

শিক্ষাবিদ-অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ, অসন্তোষ এবং লিখিত পরীক্ষা যুক্ত করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নপদ্ধতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন মহিবুল হাসান চৌধুরী। গত ১৪ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাবর্ষ মাত্র শুরু হয়েছে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের কাজগুলোও শুরু হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যা মনে হয়, তাহলে পরিবর্তন অবশ্যই আসবে।’

জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এনসিটিবি এবং শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি মূল্যায়নপদ্ধতির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে জন-অসন্তোষ নিরসনে তা যাচাই-বাছাইয়ের পরামর্শ দেন। এরপরই ৪ ফেব্রুয়ারি মূল্যায়নপদ্ধতি ও কারিকুলাম নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে। আর কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন এনসিটিবি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রতিনিধিরা। 

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মূল্যায়নপদ্ধতি পরিবর্তন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। একাধিকবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। আর গতকাল শনিবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের প্রধানদের সঙ্গে এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আরেকটি বৈঠক হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ের তথ্যও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, যা চূড়ান্ত করে আগামী জুনে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার আগে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে।

বৈঠকের বিষয়ে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, বৈঠকে মূল্যায়নপদ্ধতি নিয়ে এনসিটিবি একটি উপস্থাপনা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন ধরনের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে লিখিত অংশ আছে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও বৈঠক হবে। এরপর মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্ত হবে।

মূল্যায়নপদ্ধতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান ২৭ ফেব্রুয়ারি  বলেন, ‘মূল্যায়নপদ্ধতি নিয়ে অনেকের উদ্বেগ আছে। এ জন্য আমরা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। মূল্যায়নের চূড়ান্ত দিনে শিক্ষার্থী যেন পরীক্ষাকেন্দ্রে বসে কিছু করে, সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে, যা ভবিষ্যতে এভিডেন্স হিসেবে থাকবে। এটা কোনো কিছু তৈরি করা হতে পারে অথবা লিখিত পরীক্ষাও হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা প্রতিটি বিষয়েই করা হবে। এতে কোনো নম্বর থাকবে না। তবে এর ওয়েটেস থাকবে। অর্থাৎ কত শতাংশ ওয়েটেস এটা ক্যারি করবে তা নির্ধারণ হবে। তবে আগের পরীক্ষার মতো কোনো পরীক্ষা হবে না।’

উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাক্রমের চাহিদা নিরূপণ ও বিশ্লেষণের কাজটি শুরু হয় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর একাধিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ তৈরি করা হয়। এরপর গত বছর থেকে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন শুরু হয় নতুন শিক্ষাক্রম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি কলেজ কমিটির সভাপতির যোগ্যতা এইচএসসি, গেজেট জারি - dainik shiksha কলেজ কমিটির সভাপতির যোগ্যতা এইচএসসি, গেজেট জারি নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক - dainik shiksha নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক মাদরাসা শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মদ্যপ অবস্থায় আটক শিক্ষক বরখাস্ত - dainik shiksha মদ্যপ অবস্থায় আটক শিক্ষক বরখাস্ত দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028619766235352