নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনায় নোট-গাইড বা সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন পড়বে না বলে দাবি করেছিলেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাজারে চলে এসেছে অবৈধ নোট-গাইড বই। ‘সহায়ক বই’ নামে এসব গাইডে বাজার সয়লাব। ‘একের ভেতর সব’ নাম দিয়ে তৈরি এসব গাইড এখন বিক্রিও হচ্ছে বেশ। স্কুলে-স্কুলে এসব গাইডের সৌজন্য কপিও পাঠানো হচ্ছে বলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
যদিও আইনের বরাত দিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলেছে, এ গাইডগুলো অবৈধ। এগুলো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা। এ গাইড পড়ে কোনো লাভ হবে না।
আরো পড়ুন : নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতার পেছনে কোচিং-নোট ব্যবসা : শিক্ষামন্ত্রী
খুলনা অঞ্চলের একটি সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে গাইড-নোটের প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইতোমধ্যে গাইড তৈরি করা হয়েছে। একের ভেতর সব নামে এসব গাইড পাঠানো হচ্ছে স্কুলগুলোতে। বাজারেও মিলছে এসব গাইড। সারাদেশের বইয়ের দোকানগুলোতে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত এসব গাইড পাওয়া যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিউটন নামের একটি প্রকাশনী এসব বই প্রকাশ করছে।
কয়েকজন অভিভাবক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রমের গাইড বই রাজধানীর বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। পাঁচ খণ্ডের এক সেট বইয়ের দাম নেয়া হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
এদিকে নতুন শিক্ষাক্রমের গাইড বই বাজারে আসার খবরে অবাক হয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ শুক্রবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ ধরণের গাইডতো আসার কথা না। তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান শুক্রবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের গাইড বই অবৈধ। এ ধরণের বই পড়ে কোনো লাভ হবে না। আমাদের মূল্যায়নের বড় অংশ হবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। ধারাবাহিক মূল্যায়নে গাইড বই কোনো প্রভাব রাখতে পারবে না। আর ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়নের (পরীক্ষা) নির্দেশনা আমরা কৌশলগত কারণে দেইনি, যাতে কেউ গাইড না তৈরি করতে পারে। গাইড প্রকাশকরা গতবছর থেকে এ নির্দেশনার জন্য ঘুরছে। আমাদের এ নির্দেশনা প্রস্তুত থাকলেও আমরা প্রকাশ করিনি।
তিনি আরো বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের গাইড অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা। এর মাধ্যমে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ হবে না। শুধু শুধু টাকা ও সময়ের অপচয় হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে, একটা নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে হলে অনেক রকমের কিছু করতে হয়। সেখানে অনেক ঘাটতি থাকতে পারে, অনেক সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু এই শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে, এটি চলবে। কেউ কেউ কোথাও কোথাও মনে করছেন তাদের কোচিং ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কোচিং ব্যবসা চলবে না। কেউ কেউ ভাবছেন তাদের নোট-গাইডের ব্যবসা চলবে না। সেই কারণে অনেকে বিরোধিতা করছেন। আমরা কিন্তু সেটিও লক্ষ্য রাখছি। নতুন কারিকুলাম থাকবে, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আমাদের শিক্ষার্থীরা জেনে, বুঝে, শিখে প্রয়োগ করতে শিখে দক্ষ-যোগ্য মানুষ হবে। আমরা অনেক বেশি বিজ্ঞান প্রযুক্তির ওপর যেমন জোর দিচ্ছি, একই সঙ্গে মানবিক সৃজনশীল মানুষ হওয়া জরুরি। সেদিকেও আমরা জোর দিচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন চিন্তা করতে শেখে, যেন সমস্যার সমাধান করতে শিখে।
গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। একইভাবে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে তা বাস্তবায়িত হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই বদলে গেছে। মূল্যায়নেও আসছে বড় পরিবর্তন। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও পরীক্ষার মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। আর বাকি বিষয়গুলো জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা বিষয়গুলোতে শিখনকালীন মূল্যায়ন শতকরা ১০০ ভাগ।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ায় নোট-গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। যদিও প্রস্তাবিত এই আইনে সরকারের অনুমোদন নিয়ে সহায়ক বই বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।