নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পরপরই প্রয়োজন সাপেক্ষে শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে প্রথমেই অভিভাবকদের যেনো মনের কথা, আগ্রহের কথা, আক্ষেপের কথা বুঝলেন। এই কথার মধ্যে দিয়ে অভিভাবকদের মনে নিঃসন্দেহে আনন্দের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশে-বিদেশে কতোকিছুই না ঘটলো। বিদেশিরা যা করতে পারেনি তার চেয়ে ঢের বেশি করেছেন দেশের মানুষেরা। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি একজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা এবং একাধিকবার ট্রেনে অগ্নিসংযোগ। ট্রেনের অগ্নিকাণ্ডে অনেককে জ¦লন্ত পুড়ে ছাই হতে হয়েছে কিছু মানুষ নামের নরপশুর হাতে। কী বিভৎস চিত্র দেশবাসীকে দেখতে হলো তা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য। এ ছাড়া প্রতিদিন অনেক গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। এই চিত্র দেশি-বিদেশি মানুষের মনে তীব্র ঝড় তুলেছে, যা এক ঘৃণ্য মানসিকতার পরিচয়। এতো কিছুর পরও বড় কোনো অঘটন ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের মানুষ সন্ধিহান ছিলো, আদৌ নির্বাচন হতে পারবে কি না। নির্বাচনের পর যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলো সেখানেও চমক দেখিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত মন্ত্রিসভা থেকে অনেক ঝানু ঝানু মন্ত্রী এবার বাদ পড়েছেন। ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এবারের মন্ত্রিসভাতে কিছু নতুন মুখ যুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন তা শুধু অবিশ্বাস্য নয়, বিস্ময়করও বটে।
এই চ্যালেঞ্জিং মন্ত্রিসভায় এবার সবচেয়ে কনিষ্টতম মন্ত্রী হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আলহাজ এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান চট্টগ্রাম সদর আসন (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি এই আসন থেকে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। গতবারের মন্ত্রিসভায় তাকে দেয়া হয়েছিলো শিক্ষা উপমন্ত্রীর পদ। আর এবার পেলেন শিক্ষামন্ত্রীর পদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি কতোটুকু আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে এতোবড় পদটি অর্পণ করতে পারেন তা অনেকের কল্পনার জগৎকে ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে বিগত মন্ত্রিসভা থেকে বাঘা বাঘা মন্ত্রীরা ঝরে পড়লেন, সেখানে বাংলাদেশের একজন সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন একটি বড় পদ এতেই বোঝা যায় তার কর্মপরিধি কতো বিস্তৃতি, কতো গভীর। এখন অনেকের মুখ থেকে একটি কথা বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে সেটি হচ্ছে ‘প্রধানমন্ত্রীর ম্যাজিক: ছোট মন্ত্রীর বড় পদ’।
যাই হোক মহিবুল হাসান চৌধুরীর এই অর্জনে পুরো চট্টগ্রামবাসী আনন্দিত ও গর্বিত। এমনিতেই ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল একজন ব্যাতিক্রমী ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব। সভা-সমাবেশে তার অনেক কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি বেশি কথা বলেন না, আমরা জানি যিনি কম কথা বলেন তার ভুল কম, আর যিনি বেশি কথা বলেন তার ভুলও থাকে বেশি। আমার মনে হয় ব্যারিস্টার নওফেল সে পদ্ধতিটা আবলম্বন করেন। তিনি খুব কম বক্তৃতা করেন এবং যা বলেন অত্যন্ত গুছিয়ে বলে শেষ করেন। তার এই অভাবনীয় গুণটি ইতিমধ্যে অনেকের চোখে ধরা পড়েছে। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও অনেক ভালো কাজ দেখিয়েছেন যেখানে যা বলার অত্যন্ত সাবলীলভাবে তিনি উপস্থাপন করতেন। আশা করি বর্তমানে তার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হলো সেটিতেও তিনি উতরে যাবেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে ক’টি বিষয় নিয়ে সাধারণ নাগরিকরা চিন্তিত, তার একটি হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। গত বছর থেকে এই নতুন শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও তা পুরোদমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এই না পারার কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মারাত্মকভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। আমার কথাই বলি, আমার ছোট সন্তান এ বছর ৭ম শ্রেণিতে উঠলো। তার ৬ষ্ঠ শ্রেণি ছিলো নতুন ক্যারিকুলামের। নতুন ক্যারিকুলাম হওয়ায় শিক্ষকদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং না দিয়েই চালু করা হয়েছিলো। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকরা পূর্ণ ট্রেনিং ব্যতিরেকে ক্লাস নিতে গিয়ে দেশ জুড়ে এক বিশৃঙ্খল ও হৈচৈ পড়ে যায়। সরকার, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা এক রকম মুখোমুখি অবস্থান নেন। শিক্ষকরা পড়ানোর নিয়ম-কানুন না বোঝার কারণে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বলতে গেলে এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নতুন কারিকুলামপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনেকটা হেসেখেলে বছরটি পার করতে হয়েছে। এ বছর শিক্ষার্থীরা তেমন কোনো শিক্ষা অর্জন করেছেন বলে কোনো অভিভাবক বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না। লেখাপড়ার প্রতি কোনোরকম চাপ না থাকার কারণে পুরো বছর জুড়ে সন্তানরা মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে ডুবে ছিলেন। এই মোবাইল আসক্তি থেকে কীভাবে দূর করা যায়, নতুন করে সে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে নতুন শিক্ষামন্ত্রীকে। যে এক বছর অভিভাবকরা দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করেছেন তা যাতে চলতি বছর না হয় সে ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ, শিক্ষা ছাড়া ভবিষৎ অন্ধকার। শিক্ষা দিয়ে অন্ধ কুসংস্কারকে জয় করতে হবে। আমি বা আমরা কেউ সরকারের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে নই। আমার মতো অনেকের কথা হচ্ছে এই কারিকুলাম চালু করার আগে পূর্ণাঙ্গরূপে শিক্ষকরা সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন কি না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত ছিলো। যেখানে ক্লাসের শিক্ষকরা পড়ানোর নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত নন সেখানে অভিভাবকরা কীভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাবেন। আশা করবো সে অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
যাই হোক শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন নতুন মন্ত্রী পেয়েছে। প্রত্যাশা তিনি দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে বসবেন এবং একই সঙ্গে অভিভাবকরা কী বলতে চান সেদিকেও গুরুত্ব দেবেন। মানুষের বয়স কম হলেই যে জ্ঞান গরিমায় ছোট হবে তা ভাববার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকরা মনে করেন, বয়সে নবীন হলেও একজন যোগ্য মানুষের হাতে শিক্ষার ভার তুলে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক অসীম সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছেন। মন্ত্রী শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো কীভাবে যুগোপযোগী করে আধুনিকায়ন করা যায় সে ব্যাপারে আরো বেশি মনোযোগী হবেন। তিনি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। দেশের আঠার কোটি জনগণের এটাই একমাত্র প্রত্যাশা।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।