ননএমপিও শিক্ষকদের অনুদান : কেউ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ননএমপিও দেড় লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীকে অনুদান দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদুল ফিতরের আগে গত মে মাসে এ টাকা ছাড় করা হলেও আড়াইমাস পড়েও সব শিক্ষক অনুদানের টাকা পাননি। তবে, কোনও কোনও শিক্ষক টাকা পেয়েছেন। টাকা না পেয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনুদান না পাওয়া শিক্ষকরা। তারা দ্রুত অনুদানের টাকা শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছেন। 

এদিকে মন্ত্রণালয় বলছে, সব শিক্ষকের তথ্য ঠিক না থাকায় টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। যাদের তথ্য ঠিক আছে তাদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ টাকা পাঠানো হচ্ছে। তথ্য সংশোধনের পর দ্রুত এ টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও কিছুদিন আগে সংসদে একই কথা জানিয়েছিলেন। 

করোনাকালে বিপর্যস্ত ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য চলতি বছরের ঈদুল ফিতরের আগে প্রণোদনার টাকা বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের ৫ হাজার টাকা ও কর্মচারীদের ২ হাজার ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। নানান জটিলতা কাটিয়ে প্রণোদনার সেই টাকা গত জুলাই মাসে সে টাকা বিতরণ শুরু হয়। শিক্ষক কর্মচারীদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে সে টাকা পাঠানো হচ্ছে। তবে, ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ অনুদানের টাকা পেয়েছেন আবার কেউ পাননি। একই প্রতিষ্ঠানের একই স্তরের একই সাথে কর্মরতদের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। 

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলছেন, 'গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চেকের মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিতরণ করা হয়েছিল। সেসময় তালিকাভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সহজেই টাকা পেয়েছিলেন। তবে এবার কোন শিক্ষক টাকা পাচ্ছেন আবারা অনেকে পাচ্ছেন না। একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছয়জন ননএমপিও শিক্ষকের মধ্যে চারজন টাকা পেয়েছেন, দুজন পাননি। কর্মচারী চারজনের মধ্যে দুজন পেয়েছেন, দুজন পাননি।

খুলনার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মোড়ল দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ঈদুল ফিতরের আগে কিছু সংখ্যক শিক্ষক অনুদানের টাকা পেয়েছেন দিয়েছে। আমাদের কলেজে ননএমপিও শিক্ষক ২৫ জন। সেখানে ৬ থেকে ৭ জন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়েছেন। বাকি কেউ আজ পর্যন্ত টাকা পাননি। শুধু আমার কলেজে নয় সারাদেশে অনেক কলেজ আছে যেখানে একজন শিক্ষক কর্মচারীও টাকা পাননি। গত বছর আমাদের অনুদানের টাকা চেকের মাধ্যমে দিয়েছিল, তখন সবাই পেয়েছিল। এবার দিচ্ছেনা। শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছেন বিষয়টি দেখছি, দেখবো। তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারিতে বেশিরভাগ কলেজ বেতন বন্ধ রেখেছে। এ অনুদানের টাকা পেলে শিক্ষকরা কিছুটা স্বস্তি পেতেন। 

সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের ননএমপিও শিক্ষক মুরাদ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তার কলেজের ডিগ্রি স্তরের শিক্ষকদের ছয়জনের মধ্যে চারজন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়েছেন অথচ দুইজন এখনো পাননি। প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষকের তথ্য সঠিক আছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। 

একই উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের অফিস সহকারী বিলকিস রুখসানা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, 'এখনো পর্যন্ত তার কলেজের কোন শিক্ষক কর্মচারী প্রণোদনার টাকা পাননি।'

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

কলারোয়া পৌরসভার কে এম এ মিউনিসিপ্যাল জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, 'এখনও পর্যন্ত তার স্কুলে শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রণোদনার টাকা পাননি।' 

হাবিবুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ মো. অহিদুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রণোদনার টাকা আমরা পাইনি।' ভুক্তভোগী ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের অনুদানের টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের অনুদানের টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে, শিক্ষক-কর্মচারীদের এনআইডি ও মোবাইল ব্যাকিং অ্যাকাউন্টের তথ্যে গরমিল থাকায় সবার টাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আর ত্রুটিপূর্ণ তথ্য অনুসারে টাকা পাঠালে একজনের টাকা অন্যজনের কাছে চলে যেতে পারে। তাই সে তথ্যগুলো যাচাই বাছাই চলছে। যাদের তথ্য সঠিক আছে তাদের টাকা পাঠানো হচ্ছে। বাকিদের টাকাও দ্রুত পাঠানো ব্যবস্থা করা হবে। 

জানা গেছে, গত বছরও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের বিশেষ অনুদানের টাকা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন ডিসি ও ইউএনওদের তত্ত্বাবধায়নে চেকের মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারীদের টাকা দেয়া হয়েছিল।

ঈদুল ফিতরের আগে ১২মে করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে পড়া সারা দেশের ননএমপিও
শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদান প্রদানের জন্য বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের ৫ হাজার ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, সারাদেশের সাধারণ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন, কারিগরি ও মাদারাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ৬১ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষক কর্মচারীকে এ অনুদান দেয়া হচ্ছে। এসব শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনুদান দেয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে প্রায় ৭৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রত্যেক নন-এমপিও শিক্ষক এককালীন অনুদান পাবেন ৫ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কর্মচারী পাবেন ২ হাজার ৫০০ টাকা করে। প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য ৪৬ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ৬১ হাজার ৪৪০ নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য ২৮ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044291019439697