নাট্যকার সেলিম আল দীনের জন্মদিন আজ

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

বাংলা ভাষার আধুনিককাল পর্বের অন্যতম নাট্যকার সেলিম আল দীন এর জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সীমান্তবর্তী ফেনী জেলার অন্তর্গত সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব কাস্টমস্ এবং মাতা মরহুমা ফিরোজা খাতুন। তার পিতামহ হাজী আফতাব উদ্দিন ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক।

তিনি নিজ গ্রাম সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে থেকে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ২য় বিভাগে এসএসসি, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ফেনী কলেজ থেকে ২য় বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ১ম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ২য় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর রাজনৈতিক কারণে তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয়ল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগ থেকে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি বিজ্ঞাপন সংস্থা বিটপী’তে কপি রাইটারের পদে যোগদান করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘদিন বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করার পর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে যোগদান এবং উক্ত বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি এ দেশের নাট্যশিল্পকে বিশ্বনাট্য ধারার সঙ্গে সমপংক্তিতে সমাসীন করার লক্ষ্যে ১৯৮১-৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এবং নাট্য-নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফ সারাদেশব্যাপী গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।

বাংলাদেশের বিচিত্র শ্রমজীবি, পেশাজীবী, বাঙালি ও বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজজীবন ও তাদের আবহমান কালের সংস্কৃতিকে তিনি তার নাটকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তিদান করেছেন। জীবদ্দশায় তিনি একজন নাট্যকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও সমকালীন বিশ্বের শিল্পধারায় নতুন নন-জেনরিক শিল্পধারার প্রবর্তনে সচেষ্ট ছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি নাট্যকার পরিচয়ের বাইরে ছিলেন-একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, সংগঠক, নাট্যনির্দেশক এবং শিল্পতাত্ত্বিক। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে তিনি অন্যান্যদের সঙ্গে গঠন করেন ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। মূলত ঢাকা থিয়েটারের সাংগঠনিক কাঠামো থেকে তিনি তার সুবিস্তৃত নিরীক্ষামূলক নাট্য রচনা ও তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। জীবদ্দশায় তিনি বিভিন্ন রচনায় লিখেছেন-শিল্পাদর্শে তিনি ছিলেন দ্বৈতাদ্বৈতবাদী। আসলে, পাশ্চাত্য শিল্পের সব বিভাজনকে বাঙালির সহস্র বৎসরের নন্দতত্ত্বের আলোকে অস্বীকার পূর্বক তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নবতর শিল্পরীতি প্রবর্তন করেছেন।

অল্প বয়স থেকেই সলিম আল দীনের লেখক জীবন শুরু হলেও ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে কবি আহসান হাবিব সম্পাদিত ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে আমেরিকার কালো মানুষদের নিয়ে তার প্রথম বাংলা প্রবন্ধ নিগ্রো সাহিত্য প্রকাশিত হয়। তার প্রথম রেডিও নাটক বিপরীত তমসায় ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে এবং প্রথম টেলিভিশন নাটক আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় লিব্রিয়াম (পরিবর্তিত নাম ঘুম নেই) প্রচারিত হয় ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। আমিরুল হক চৌধুরী নির্দেশিত এবং ‘বহুবচন’ কর্তৃক প্রযোজিত তার প্রথম মঞ্চনাটক সর্প বিষয়ক গল্প মঞ্চায়ন হয় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে। পরে তিনি ইটালি, ফ্রান্স, আমেরিকা ও স্প্যানিশ সাহিত্য থেকে গল্প, কবিতা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানবিষয়ক বহু প্রবন্ধের অনুবাদ করেন এবং সেসব প্রবন্ধ সমসাময়িক বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে একের পর এক নতুন নতুন বিষয় ও আঙ্গিকে সৃষ্ট তার নাটক উচ্চারিত হয় বাংলা মঞ্চে ও টেলিভিশনে। তার উল্লেখযোগ্য নাটক ও নাট্যগ্রন্থ- সর্প বিষয়ক গল্প ও অন্যান্য নাটক, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, বাসন, তিনটি মঞ্চ নাটক: মুনতাসির, শকুন্তলা ও কিত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, প্রাচ্য, কিত্তনখোলা, হাতহদাই, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হরগজ, একটি মারমা রূপকথা, বনপাংশুল, নিমজ্জন, ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল, ঊষা উৎসব ও স্বপ্নরমণীগণ ইত্যাদি।

নাট্য ও গবেষণামূলক রচনাকর্মের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন নাটক রচনা, চলচ্চিত্রের সংলাপ রচনা ও মঞ্চনাট্যের নির্দেশক হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

নাট্যকার সেলিম আল দীন দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব, ফিউশন তত্ত্ব’র প্রবক্তা এবং নিউ এথনিক থিয়েটারের উদ্ভাবনকারী। বাঙলা নাটকে অসামান্য অবদানের জন্য দেশে বিদেশে তিনি বহুবার সংবর্ধিত এবং জাতীয় পুরস্কারসহ বহু পরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক পুরস্কার হলো- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, নান্দীকার পুরস্কার (আকাদেমি মঞ্চ কলকাতা, ১৯৯৪), শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন নাট্যকার (টেনাশিনাস পুরস্কার), খালেকদাদ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (একাত্তরের যীশু, শ্রেষ্ঠ সংলাপ) (১৯৯৪), একুশে পদক, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার  ইত্যাদি। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002457857131958