নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে ৪৫ নার্সিং প্রতিষ্ঠানে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

সাইক নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান আবু হাসনাত মো. ইয়াহিয়া এবং ডিডব্লিউএফ নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের মোট ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) তদন্ত কমিটি।  

এর মধ্যে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে নিবন্ধন নেয়া, শিক্ষক সংকট, অসামঞ্জস্যপূর্ণ এফডিআরসহ অনিয়ম ও অসংগতি পাওয়ায় ইয়াহিয়া ও জহিরুলের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) কাছে সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছে।

গত ১২ মে ‘নার্সিং শিক্ষায় সিন্ডিকেট কর্তৃত্বে দুই সর্দার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে; যা আমলে নিয়ে ২৮ মে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে ডিজিএনএম। চলতি সপ্তাহে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া কাগজ দেখিয়ে নার্সিং কলেজের নিবন্ধন নিয়েছেন সাইক চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া এবং ডিডব্লিউএফের চেয়ারম্যান জহিরুল। শুধু তাদের নামেই নিবন্ধন নেয়া রয়েছে অন্তত ৫৯টি প্রতিষ্ঠান। তারা নিজেদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ প্রাইভেট নার্সিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও গঠন করেন। মূলত অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ধরে রেখেছেন তারা। ইয়াহিয়া পরিচালিত ৪৪টি নার্সিং কলেজর মধ্যে ৩০টিতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। চারটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই ঠিকানা পরিবর্তন করেছে। বিএনএমসির নীতিমালা অনুযায়ী একটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠায় ন্যূনতম ৩০ হাজার স্কয়ার ফুটের ভবন থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ইয়াহিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ভবনও ৩০ হাজার স্কয়ার ফুটের পাওয়া যায়নি। একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা এফডিআর করতে হয়। তবে ইয়াহিয়ার চারটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের সময় একই এফডিআর দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া একজন অধ্যক্ষ দিয়ে তিন থেকে চারটি প্রতিষ্ঠান চালানোরও প্রমাণ মিলেছে। 

অন্যদিকে জহিরুল পরিচালিত সুলতানা রাজিয়া নার্সিং কলেজটি অনুমোদনের জন্য প্রজেক্ট প্রোফাইল জমা দেওয়ার আগেই পরিদর্শনে যান বিএনএমসি কর্মকর্তারা। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে কোনো এফডিআর নেই। এ ছাড়া ন্যাশনাল নার্সিং কলেজটি জহিরুল পরিচালনা করলেও চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করা হয়নি কাগজপত্রে। রাজধানী কলেজে অনুমোদনের এক মাসের মাথায় বিএনএমসির অনুমতি না নিয়ে বাড়ানো হয়েছে আসন। আরেকটি নার্সিং কলেজেও বিএনএমসির অনুমতি না নিয়ে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া এই দুই মালিকের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট, প্রয়োজনীয় ল্যাব, লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম ও অডিও ভিজ্যুয়াল রুম নীতিমালা অনুযায়ী পায়নি তদন্ত কমিটি। 

অভিযোগের বিষয়ে আবু হাসনাত ইয়াহিয়া বলেন, রাশিদা আক্তার বিএনএমসির ডেপুটি রেজিস্ট্রার হাওয়ার পর যেসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পেয়েছে তার একটিরও ৩০ হাজার স্কয়ার ফুটের বেশি ভবন নেই। তাহলে কীভাবে অনুমোদন পেল? এফডিআরের কাগজপত্র কাউন্সিলের কর্মকর্তারা ফটোকপি করে জমা দিতে পারে। আমার প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু জমি ভাড়া নেয়া ও কিছু কেনা। এ ছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠান এক অধ্যক্ষ দিয়ে পরিচালনা করি না। ছয় মাস পরপর অধ্যক্ষ বদলি করি।

জহিরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে অন্যের প্রতিষ্ঠান আমার বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর নীতিমালা অনুযায়ী অনেক কিছু বাস্তবায়ন সম্ভব। নার্সিং শিক্ষার উন্নয়নে আমরা আগে প্রতিষ্ঠান গড়ায় মনোযোগ দিয়েছিলাম। এখন মানোন্নয়নে কাজ করছি।

বিএনএমসির রেজিস্ট্রার রাশিদুল মান্নাফ কবির বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনও আমার কাছে জমা পড়েনি। তবে যদি অনিয়ম প্রমাণ হয়, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030288696289062