নার্সিং পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস : শিক্ষক-প্রশ্নপত্র কমিটি মিলে চক্র, ১৫ হাজারে বিক্রি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজগুলোর বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে একটি নার্সিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত রবিবার রাতে রাজধানীর মহাখালী, ধানমণ্ডি ও আজিমপুর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা ফরিদা খাতুন (৫১), মনোয়ারা খাতুন (৫২), নার্গিস পারভীন (৪৭), কোহিনুর বেগম (৬৫), ইসমাইল হোসেন (৩৮) ও আরিফুল ইসলাম (৩৭)।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, নার্সিং কলেজের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষক এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এই চক্র গড়ে তোলেন মহাখালীর একটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষক ফরিদা খাতুন।

এই চক্র গত পাঁচ বছরে নার্সিং পরীক্ষার একাধিক প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। পরীক্ষার্থীদের কাছে ১৫ হাজার টাকায় প্রশ্নপত্র বিক্রি করত তারা।

গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২০ আগস্ট নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষ ফাইনাল বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষা শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র আদান-প্রদানের তথ্য পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি ও সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ছবি উদ্ধার করে। অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাব চক্রের এই ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, অভিযুক্তরা নার্সিং কলেজগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন্নপত্র প্রণয়ন কমিটি, মডারেটর ও ডিন থেকে নির্বাচিত প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত গোপন টিমের সদস্য ছিলেন। এ কারণে সহজেই প্রশ্ন ফাঁস করতেন তাঁরা।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে ৯৮টি নার্সিং কলেজের মধ্যে বর্তমানে ৩৮টি কলেজে পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন প্রশ্ন প্রণয়নকারী নিয়োগ দেওয়া হয়, যাঁরা দুই সেট আলাদা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে থাকেন। পরবর্তী সময়ে এই প্রশ্নপত্রগুলোকে যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি মডারেটর টিম নিয়োগ করা হয়, যাদের কাজ প্রশ্নপত্রগুলো থেকে পরীক্ষার জন্য এক সেট পরিপূর্ণ প্রশ্নপত্র তৈরি করে সেগুলো সিলগালার মাধ্যমে চিকিৎসা অনুষদের ডিনের কাছে জমা দেওয়া। চিকিৎসা অনুষদের ডিন বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রশ্নপত্র সরবরাহের জন্য চার সদস্যদের একটি টিম নিয়োগ করে থাকেন; যারা নির্বাচিত প্রশ্নপত্রটি প্রিন্টিং ও প্যাকেজিংয়ে নিযুক্ত থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করে আলাদা আলাদা প্যাকেটে কেন্দ্রের নাম লিখে সিলগালা করে দেয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রশ্নপত্রগুলো বিভিন্ন কেন্দ্রে বিতরণ করে থাকে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই প্রশ্নপত্রের কপি সরিয়ে ফেলা হয়।

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা ফরিদা খাতুন। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে মহাখালীর কম্প্রিহেনসিভ নার্সিং অ্যান্ড প্যাথফিজিওলজি বিষয়ের প্রশিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকেজিংয়ের দায়িত্বে থাকেন। নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম তাঁর অন্যতম সহযোগী। তাঁরা  শিক্ষকতার আড়ালে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। গ্রেপ্তার ফরিদা বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় চিকিৎসা অনুষদের ডিনের নির্বাচিত চার সদস্যদের গোপনীয় টিমের একজন। মনোয়ারা ও নার্গিসও প্রায় ১০ বছর ধরে একটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষক। তাঁরাও আগে বিভিন্ন সময় নার্সিং কলেজগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি, মডারেটর ও ডিনের নির্বাচিত প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত গোপন টিমের সদস্য ছিলেন।

কোহিনুর বেগম ২০০৮ সাল থেকে ঢাকার একটি সরকারি নার্সিং কলেজে নার্সিং প্রশিক্ষক ছিলেন। ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ইসমাঈল হোসেন রাজধানীর একটি নার্সিং কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং আরিফ ঢাকার একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী। তাঁরা গত ২০ আগস্ট কোহিনুর বেগমের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করেন। আরিফ ২০১৭ সালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চক্রের আরো কয়েকজনের নাম আমরা জেনেছি, তাদের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছে। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033049583435059