নার্সিং শিক্ষায় সিন্ডিকেট, কর্তৃত্বে দুই সর্দার

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

নার্সিং শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল গঠন করা হয়। তবে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। কর্মকর্তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী পছন্দের ব্যক্তির নামে বেসরকারি নার্সিং কলেজের অনুমোদনের ঘটনা অহরহই ঘটছে। ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে এখানকার একটি সিন্ডিকেট। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে সারাদেশে ৩৭২টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে অবৈধভাবে শতাধিক নার্সিং কলেজের নিবন্ধন নিয়েছেন এ সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্য সাইক নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান আবু হাসনাত মো. ইয়াহিয়া এবং ডিডব্লিউএফ নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম। শুধু এ দু’জনের নামেই নিবন্ধন নেয়া রয়েছে ৫৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আবু হাসনাত ৪৪টি ও জহিরের ১৫টি। শুক্রবার (১২মে) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, নিজেদের প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো পরিচালনার জন্য নিজেরাই তৈরি করছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট নার্সিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনের সভাপতি হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন পেয়েছে ২০২০ থাকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ পরিদর্শন করছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিলুফার ইয়াসমিন।

যোগ্যতাসম্পন্ন নার্স তৈরির লক্ষ্যে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান ও নার্সিং কোর্স চালু-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ নীতিমালায় একটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে ন্যূনতম ৩০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি ভবন, প্রতিষ্ঠানের নামে ১০ লাখ টাকার এফডিআর, প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিস্ট্রিকৃত জমি ও একজন দক্ষ প্রিন্সিপাল প্রয়োজন। চারজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে থাকবেন একজন শিক্ষক। ব্যবহারিক শিক্ষায় আট শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। থাকবে প্রয়োজনীয় ল্যাব, লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম ও অডিও ভিজ্যুয়াল রুম। তবে এ নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে, মিথ্যা তথ্য ও জাল সনদ দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় অবৈধভাবে এসব নার্সিং ইনস্টিটিউট ও কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে।

কোন বিভাগে কতটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাবে– এমন কিছু নীতমালায় না থাকায় ডিডব্লিউএফ নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান নিজ বিভাগ বরিশালে ১৫টি নার্সিং কলেজ গড়ে তুলেছেন। অন্য কোনো ব্যক্তি নার্সিং কলেজের অনুমোদন পাননি এ বিভাগে। এসব প্রতিষ্ঠানেও নানা অনিয়ম রয়েছে। একটি ভবন দেখিয়ে গড়ে চারটি করে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। যখন যে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান, তখন সাইনবোর্ড বদল করে সেই নামীয় প্রতিষ্ঠান দেখানো হয়। একসঙ্গে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ভবন, এফডিআর, জমির দলিল ও ১৫ জন প্রিন্সিপাল দেখতে চাইলেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জহিরুল ইসলামকে ফোন করে অবৈধ নার্সিং ইনস্টিটিউট পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে দ্রুত তিনি সংযোগ কেটে দেন। এর পর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

বাংলাদেশ প্রাইভেট নার্সিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাইক নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যানের নামেও ৪৪টি নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে নিবন্ধন নেয়া হয়েছে। এমনকি নীতিমালা মেনে পরিচালিত হচ্ছে না। এমন অভিযোগের বিষয়ে আবু হাসনাত মো. ইয়াহিয়া বলেন, সরকারি নীতিমালা মেনে নিবন্ধন নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। সবকিছু ঠিক না থাকলে কাউন্সিল আমার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন দিত না। একটি প্রতিষ্ঠানও নিয়মের বাইরে পরিচালিত হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম নিজের দুর্নীতির সহায়ক হিসেবে নিলুফার ইয়াসমিনকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ পদে নিয়োগের জন্য নার্সিং প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলেও তাঁর এ দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছিল না। বেসরকারি একটি ডে কেয়ার পরিচালনা অভিজ্ঞতা দেখিয়ে এ পদে এসেছেন তিনি। এমনকি নিজ মালিকানায় বেশ কয়েকটি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করে আসছেন।

রাজধানীর আদাবর এলাকায় নিলুফার ইয়াসমিনের প্রতিষ্ঠান নাইটেঙ্গেল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, একই বিল্ডিংয়ে বিভিন্ন স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝে একটি ২ হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অভিযোগের বিষয়ে নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে আসার আগেই নার্সিং কলেজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। অবৈধ প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, একার পক্ষে এসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়া সম্ভব নয়। সচিব, উপসচিবসহ একটি টিম পরিদর্শনে যায়। সবকিছু ঠিক থাকলে অনুমোদন দেয়া হয়।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম অবসরে যাওয়ার পর রাশিদা আখতারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা রয়েছে নীতিমালাবহির্ভূত কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না দেয়া। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে সব প্রকার অনিময় রুখতে নীতিমালা আপডেট করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026419162750244