জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশের একটি জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান। গতকাল শুক্রবার এই প্রতিষ্ঠানটি ৫০তম বছর অতিক্রম করেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা প্রতিষ্ঠানটিকে পাবিলক হেলথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, নিপসম প্রতিষ্ঠার পর গত ৫০ বছরে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের জনস্বাস্থ্যবিদ তৈরির পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নিতে এখন প্রতিষ্ঠানটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করা সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম চালু করা গেলে দেশ-বিদেশের স্বাস্থ্য ও দাতব্য সংস্থাগুলোর সাথে বিষয়ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রমের পরিধি আরো বাড়ানো ও গবেষক তৈরি সহজ হবে। গতকাল নিপসমের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর মহাখালী ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, সংক্রামক-অসংক্রামক ব্যাধি ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য নিয়ে নিপসমের গবেষণা ও অবদানের ওপর আলোচনা হয়।
নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মো: জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ডা: মো: সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: মো: আবু জাফর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: নাজমুল হোসেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি আহমেদ জামসেদ মুহাম্মদসহ নিপসমের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে আলোচনা সভায় নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা: মো: জিয়াউল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের ৫০ বছরের সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে কিভাবে জনস্বাস্থ্য অবদান রেখেছে এবং রাখতে পারে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৭৪ খিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার সময় দু’টি স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে নিপসম। বর্তমানে ৯টি এমপিএইচ প্রোগ্রাম এবং একটি এমফিল কোর্স পরিচালনা করছে। নিপসম পাঁচ দশকে কয়েক হাজার জনস্বাস্থ্য পেশাজীবী তৈরি করেছে, যারা দেশ-বিদেশে জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠানটি অসংখ্য জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সম্পন্ন করেছে। যেগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে নিপসমের ২২টি অ্যাকাডেমিক বিভাগ এবং আধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পরামর্শ সেবায় নিপসম শ্রেষ্ঠত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। স্বীকৃতি হিসেবে নিপসমকে একটি বিশেষায়িত জনস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি ডক্টর অফ পাবিলক হেলথ কোর্স চালুসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পাবলিক হেলথ সেবায় জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদ সৃষ্টি প্রয়োজন বলে জানান।
সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন দক্ষ জনস্বাস্থ্য জনবল তৈরি, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে নিপসমের অবদান স্বীকার করেন। তিনি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যে অসমতা দূরীকরণে নিপসমের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্দিষ্ট আকারে প্রস্তাব দিলে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হবে বলে জানান। স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা: মো: সারোয়ার বারী বলেন, মানুষের সুস্বাস্থ্য অর্জন ও রক্ষায় জনস্বাস্থ্য একটি মৌলিক বিষয়। দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ তৈরি করেছে নিপসম। এ প্রতিষ্ঠানই প্রথম জনস্বাস্থ্যের ওপর এমপিএইচ কোর্স করে। তিনি নিপসমকে জনস্বাস্থ্য গবেষণায় প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ বাড়ানো এবং সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে জোর দেন। অধ্যাপক ডা: মো: আবু জাফর বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়ে ও গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণে নিপসমের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: নাজমুল হোসাইন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নিপসমের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে ধরে শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে দুই পর্বের বৈজ্ঞানিক অধিবেশনের আটটি গবেষণাপত্র এবং আরো আটটি গবেষণাপত্রের পোস্টার উপস্থাপন করা হয়। এতে যথাক্রমে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা: জিয়াউল ইসলাম এবং কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো: গোলাম ছারোয়ার।