দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে নওগাঁয় চোখে কালো কাপড় বেঁধে সড়কে অবস্থান নিয়েছে ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া নামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর থেকে ঘণ্টাব্যাপী শহরের তাজের মোড় ও ব্রিজের মোড়ে তিনি এই অবস্থান করেন।
ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
প্রতিবাদ অবস্থানে শিক্ষার্থীর হাতে থাকা পোস্টারে লিখা ছিল ‘সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই, দুর্ঘটনা এড়াতে ট্র্যাফিক আইন প্রয়োগ চাই’। এ সময় স্থানীয় পথচারীরাও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ছোঁয়া বলে, টিভি-পত্রিকাতে প্রতিদিন দেখি মৃত্যুর খবর। তার অধিকাংশই সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু। রাস্তায় বের হলে বা স্কুলে যাওয়ার পথে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয়ও লাগে।
ছোঁয়া আরও বলে, বেশ কয়েকদিন আগে নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এক বাবা-মা। আর বেঁচে যায় তাদের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু। এখন ভাবুন সেই শিশুটির কি হবে। শিশুটি বাবা-মার আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল সারা জীবনের জন্য। আমি চাই নিরাপদ সড়ক। নিরাপদে সড়কে চলাফেরা করতে চাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার বাবা সঙ্গীত শিল্পী খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, গত ১৮ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা ব্রিজ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যান। পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিল। এর আগে ১৭ এপ্রিল নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামের দম্পতি। আর বেঁচে যায় তাদের পাঁচ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম। এই ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্বকভাবে দাগ কেটে যায়। মেয়েটি আমার এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। যার কারণেই সে বলেছে, আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই। মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যানবাহন চালক ও মালিকদের সচেতনও করছি। শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার এমন উদ্যোগ আমাদের অনেক মুগ্ধ করেছে। এমন দাবি ও সচেতনতাবোধ যদি সবার মধ্যে জাগ্রত হতো তবে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে যেত।