দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্য বরিশাল নগরীর সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের বন্ধ ছাত্রাবাসে এখনও অবস্থান করছেন অর্ধশতাধিক ছাত্র। তাদের সঙ্গে বহিরাগতও রয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কলেজের ৩টি ছাত্রাবাসে ২৫-৩০ জন অবস্থান করছেন। তাদেরকে ছাত্রাবাস ত্যাগে বাধ্য করার জন্য পুলিশ প্রশাসন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো সুফল মিলছে না।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার কলেজের সর্বোচ্চ পরিষদ একাডেমিক কাউন্সিল সভায় পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে ছাত্রাবাসে অবস্থানকারীদের বিতাড়িত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনার পর দেশের সব কলেজের ছাত্রাবাস শিক্ষার্থীশূন্য রাখতে গত মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে সীমিত সংখ্যক ছাত্র থাকলেও সিলেটের ঘটনার পর তাদের ছাত্রাবাস ত্যাগে বাধ্য করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। তবে এ নির্দেশ জারির পরও গতকাল পর্যন্ত বিএম কলেজের ছাত্রাবাসে অর্ধশতাধিক ছাত্র অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, কলেজের অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাস (ডিগ্রি হোস্টেল), ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক ছাত্রাবাস (মুসলিম হোস্টেল) এবং জীবনানন্দ ছাত্রাবাসে (হিন্দু হোস্টেল) রয়েছেন তারা। তাদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডায় যোগ দেয় কিছু বহিরাগত। কলেজের আশপাশ এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী চক্রের সঙ্গে যাতায়াত রয়েছে কলেজে অবস্থানকারী ছাত্রদের।
মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রাবাসগুলো এখনও পুরোপুরি খালি করা যায়নি। ছাত্রদের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও আছে। অধ্যক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে ছাত্রদের সরিয়ে দিয়ে ছাত্রাবাস ফাঁকা করে দিতে। তার ধারণা, ছাত্রাবাসের বিকল্প চাবি অথবা কর্মচারীদের সহায়তায় ছাত্ররা রাতে ভেতরে ঢোকে। তবে ছাত্রাবাসগুলোর কর্মচারীরা পুলিশের কাছে দাবি করেছে, ছাত্ররা ভবন সংলগ্ন গাছ বেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ ব্যাপারে বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বলেন, সোমবার তারা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে অধ্যক্ষকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে, ছাত্রাবাসে এখনও কিছু ছাত্র রয়েছে। পুলিশ নিয়মের বাইরে ছাত্রাবাসগুলোতে সরাসরি অভিযান চালাতে পারছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, রোববার ও শনিবার রাতে তারা পুলিশ নিয়ে ৩টি ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়েছেন। ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কদের বারবার সতর্ক করেছেন। বারবার চেষ্টা করলেও কিছু ছাত্র রাতে ছাত্রাবাসে অবস্থান করছে। তারা প্রাইভেটসহ নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। অধ্যক্ষ বলেন, গতকাল একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ছাত্রাবাসে পুলিশি অভিযান চালানোর জন্য বিভাগীয় প্রধানগণ প্রস্তাব রেখেছেন।
তিনি (অধ্যক্ষ) এমন পদক্ষেপে যাওয়ার আগে আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়কদের কাছে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের তালিকা চেয়েছেন।