ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির আয়োজিত এক সমাবেশে সোমবার (২২ মে) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন তার বক্তব্যে নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন। তার এই বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ও সংবাদগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
অধ্যাপক জামাল উদ্দিন মঙ্গলবার (২৩ মে) ওই বক্তব্য দেওয়ার কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এবং যারা তার বক্তব্যের সমালোচনা করছেন তাদের বিষয়েও মন্তব্য করেছেন। এসময় তার দেওয়া বক্তব্যকে যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক বলে দাবি করেন তিনি।
অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তা অবশ্যই বাস্তবভিত্তিক। এর কিছু যৌক্তিক কারণও আছে। সেগুলো হলো:
প্রথমত, সারা বিশ্বে করোনা মহামারি আঘাত এনেছে। বাংলাদেশও এর থেকে প্রভাবমুক্ত নয়। লন্ডনে কি হচ্ছে, আমেরিকায় কি হচ্ছে তার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা দিয়ে লাভ নেই। কারণ, বাংলাদেশ একটি ছোট্ট অর্থনীতির দেশ, আর সেগুলো হলো বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমাদের সামনেই দেখেন শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কীভাবে ধ্বসে গেলো। এই করোনার কারণে আমাদের দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারের রাজস্ব আয়সহ আমাদের অর্থনৈতিক সমস্ত জায়গায় একটি খারাপ প্রভাব পড়েছে। যদিও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দূরদর্শিতার সঙ্গে বিষয়গুলো মোকাবিলা করছেন। এই মুহূর্তে যদি ইলেকশন করা হয়, তাহলে সরকারের খরচ হবে কমপক্ষে এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা। কারণ, এর আগেরবার আমার জানা মতে আটশ থেকে এক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এখন পর্যন্ত যদি করোনার প্রকোপ অব্যাহত থাকত তাহলে কি আমরা নির্বাচন করতে পারতাম? কত ইলেকশন পিছিয়েছে এমনকি জাতিসংঘের ইলেকশনও তো তিন মাস পিছিয়েছে। অথচ বাধ্যবাধকতা ছিল তিন মাসের মধ্যে করার। করোনায় আমাদের অনেক সংসদ সদস্যরা মারা গেছেন। সেজন্যও তো অনেক নির্বাচন (উপ) পিছিয়েছে। এজন্য আমি প্রতিবাদ সমাবেশে বাস্তবভিত্তিক কথাই বলেছি।
দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক সংঘাত চলমান এই সংঘাতের মধ্যে কী জাতীয় নির্বাচন করা যায়? একটা নির্বাচন করতে হলে তো কমপক্ষে একটা জাতীয় ঐক্য লাগবে। নির্বাচন কমিশনার, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী বা যার নেতৃত্বেই হোক জাতীয় পর্যায়ে সংলাপ ছাড়া বা দুই পক্ষ যদি রাজি না হয় তাহলে কী সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব? সুতরাং এখানে একটি জাতীয় ঐকমত্য বা আলোচনা দরকার।
তৃতীয়ত, ‘করোনার অভিঘাতে এখন পর্যন্ত মানুষের মনে শঙ্কা বিরাজ করছে। তারপরও এর মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের যে নির্বাচনগুলো হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলো কিন্তু ছোট পর্যায়ের নির্বাচন। অন্যদিকে, জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন হলে হাজার হাজার লোকজন কিন্তু এক জায়গায় জড়ো হবে। হাজার হাজার লোকের জনসমাবেশ হবে। সেই সমস্ত জায়গায় করোনা ছড়ানোর ভয় আছে। কারণ, আমরা প্রতিষেধক নেয়াতে করোনা এখন একটু নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু, এখনও তো এটা সুপ্ত অবস্থায় আছে। করোনার যে ভীতিটা আছে আমরা কিন্তু সাইকোলজিকালি সেই জায়গাটা থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি।’
সমালোচকদের উদ্দেশে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যেকোনো দেশেই অথবা যেকোনো সমাজেই, কোনো ব্যক্তি কোন ইস্যুতে বক্তব্য দিলে তার পক্ষে-বিপক্ষেই বলার লোক থাকে। আমাদের রাসূলে পাক (সা.) কত বড় নবী ছিলেন, তার কথারও সমালোচনা হয়েছে। আজ পর্যন্তও হচ্ছে। সুতরাং, গতকাল আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি, সমালোচকরা তাদের বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।’