আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে- সেই প্রশ্নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে তাদের ‘সমঝোতার কোনো পথ আছে কি-না’, তা জানতে চেয়েছেন সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেস সদস্য।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রিপাবলিকান পার্টির রিচ ম্যাককরমিক এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির এড কেইসের সঙ্গে বৈঠকে এমন আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
প্রায় দুই ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা বলেছে যে, তোমাদের কোনো সমঝোতার পথ আছে কি-না?
“আমরা বলেছি যে, তাদের (বিএনপির) যে দাবি, সরকার পতন হবে তারপর তারা আসবে। ওটাতে আমাদের সমঝোতার কোনো সুযোগ নাই।”
উল্টো তাদেরকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে মোমেন বলেন, “তোমাদের দেশে তোমাদের সরকার কি পতন হবে ইলেকশনের সময়ে? নিশ্চয় না। এই রকম কোনো দাবি করলে তোমরা কি আলোচনায় বসবা? নিশ্চয় না। সুতরাং ওইগুলোর প্রশ্ন উঠতে পারে না।
“আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব। এবং সেটাতে সবাই অংশগ্রহণ করুক এবং সেটা আমরা চাই। কে জিতবে না জিতবে সেটা জনগণের উপর নির্ভর করবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা অনেক ভালো কাজ করেছি, সুতরাং আমাদের ভোট দেবে। এজন্য আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, সমঝোতার বিষয় বলতে গিয়ে সফরকারী কংগ্রেস সদস্যরা দুজন দুদল থেকে আসার বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরেন।
“একজন বলল, আমাদের দেশে… আমি ডেমোক্র্যাট, উনি রিপাবলিকান। আমরা সবসময় কনসেনসাসে যাই।
“আমি বললাম, আমি এক ভদ্রলোকের সঙ্গে কাজ করতাম, তিনি কনসেনসাস বিল্ডার হিসাবে পরিচিত ছিলেন, টেড কেনেডি। আমাদের এখানে কনসেনসাস করার মতো কোন দাবিদাওয়া কারও কাছে নাই। আমরা চাই অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, আমাদের উল্টা দলতো ইলেকশনের খবরই রাখে না। তারা চায় সরকার পতন। সরকার পতন এটা কোনো সংলাপের বিষয়বস্তু হতে পারে না।”
নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস সদস্যদের জিজ্ঞাসার জবাবে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা বললাম, আমাদের সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ, আমরা নিজের তাগিদেই একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই।
“এটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন, আমরাও চাই। কারণ, আমরা চাই জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা আসি। আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনে বিশ্বাসী, নির্বাচনমুখী দল।”
অবশ্য নির্বাচন সহিংসতামুক্ত করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলেরই যে ভূমিকা রয়েছে, সে কথাও বৈঠকে তুলে ধরার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন চাই অবাধ ও নিরপেক্ষ। যতগুলো দল আছে, সব দলগুলো যদি নির্বাচনে যোগদান করে এবং তারা যদি আন্তরিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তারাও অবাধ, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চায়, তাহলে সহিংসতামুক্ত হবে।
“সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহিংসতাহীন হবে। আমরা সরকার আর ইলেকশন কমিশন চাইলেও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। আমাদের গত কয়েকটা ইলেকশনতো ভালো হয়েছে, কোনো সহিংসতা হয় নাই। আমরা চাই অবাধ-নিরপেক্ষ এবং সহিংসতামুক্ত যদি করতে হয়, তাহলে সবার আন্তরিকতা লাগবে।”
বাংলাদেশে নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ‘বেশ কয়েকগুণ’ বেশি বলে মন্তব্য করেন মোমেন। এ বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “৭২ শতাংশের মত আমাদের লোক ভোট দেয়। তোমাদের এখানে অনেক নির্বাচনে কেউ দাঁড়ায়ই না, আমাদের এখানে কয়েকশ লোক দাঁড়ায়। ওগুলোতে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই।
“আমাদের অসুবিধা হচ্ছে সকল দলের, মতের লোকের আন্তরিকতা দরকার। অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য। তারা এটার সাথে একমত হয়েছে।”
সংলাপের কোনো ‘ফর্মুলা’ কংগ্রেস সদস্যরা দিয়েছে কি-না, এমন প্রশ্ন রাখেন একজন সাংবাদিক। উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ওরা কোনো ফর্মুলা দেয় নাই।”
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিদের এমন সফর বাংলাদেশের বিষয়ে ‘ভুল ধারণা দূর করতে’ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
তিনি বলেন, “অনেক সময় এ ধরনের প্রচার হয়েছে যে বাংলাদেশ একদম ভয়ঙ্কর জায়গা, এলে মেরে ফেলবে। মানুষ খুব কষ্টে আছে, রাস্তাঘাটে মানুষ মেরে ফেলতেছে পুলিশ আর সরকার। আসলে এ ধরনের কিছু নাই।
“তারা একদম আকাশ থেকে পড়ে। শুনে এসেছে এই রকম খারাপ, এখন দ্যাখে যে অত খারাপ না। এজন্য আমরা চাই অধিকতর লোকেরা আনাগোনা করুক। নিজের চক্ষুতে দেখে যাক, যাতে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনের উপরে কোনো ডিসিশন না হয়।”
ব্যবসায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের আহ্বান জানানোর কথাও বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “দুদেশের মধ্যে দ্বিমুখী বাণিজ্য ১৪ বিলিয়ন ডলারের মত এবং বাড়ছে। এটা ভালো। আমরা বলেছি, আমাদের বাণিজ্য বাড়ছে, কিন্তু সেই পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে না। আগে অনেক বেশি আসছিল।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।