আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ৬৮টি স্থানীয় সংস্থাকে নিবন্ধন দিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে কমিশন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আপত্তি আহ্বান করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ইসির সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হকের স্বাক্ষরে ওই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
তবে সম্প্রতি বিদেশি চার ‘পর্যবেক্ষককে’ নিয়ে এসে আলোচিত-সমালোচিত ইলেকশন মনিটরিং ফোরামসহ দুটি সংস্থা বাদ পড়ছে।
ইসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদনগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই শেষে এ-সংক্রান্ত নীতিমালার ৪(৪)(ক) অনুচ্ছেদের আলোকে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কারও কোনো দাবি অথবা আপত্তি অথবা অভিযোগ থাকলে তা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আগারগাঁও, ঢাকা বরাবর লিখিতভাবে জানানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
কারও বিরুদ্ধে কোনো দাবি অথবা আপত্তি অথবা অভিযোগ থাকলে উপযুক্ত প্রমাণাদিসহ আপত্তিকারীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর উল্লেখপূর্বক ছয় সেট আপত্তি দাখিল করতে হবে। আপত্তির শুনানি শেষে তা গ্রহণ বা বাতিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
ইসি জানায়, চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন পাওয়া স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবে।
যেসব সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য তালিকায় রেখেছে ইসি সেগুলো হলোÑ মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, সেবা সোশ্যাল ফাউন্ডেশন, অগ্রদূত সংস্থা, অ্যাকটিভিটি ফর রিফরমেশন অব বেসিক নিডস, হাইলাইট ফাউন্ডেশন, মুভ ফাউন্ডেশন, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ, ডিজঅ্যাবিলিটি ইন কোজিশন অ্যাকটিভিটিস, আজমপুর শ্রমজীবী উন্নয়ন সংস্থা, আবদুল মমেন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, এসডাপ, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, লুৎফর রহমান ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, যুব উন্নয়ন সংস্থা, শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র, বঞ্চিতা সমাজকল্যাণ সংস্থা, কেরানীগঞ্জ হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, এসকে কল্যাণী ফাউন্ডেশন, সোসাইটি ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অব রুরাল পিপল, সেতু রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, সোসাইটি ফর ট্রেনিং অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন, রুরাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট, ডেভেলপমেন্ট হেল্পিং কি, তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন, স্বাস্থ্য শিক্ষাসেবা ফাউন্ডেশন, বাঁচতে শেখা, ডপস ফাউন্ডেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ভলান্টারি অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট, ক্রিয়েটিভ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, জেন্ডার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সোসাইটি, ডেভেলপমেন্ট এডুকেশন অ্যান্ড পিস, বেসিক, হিউম্যান রাইটস ভয়েস, সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রাজবাড়ী উন্নয়ন সংস্থা, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার, গরিব উন্নয়ন সংস্থা, সমাহার, সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা, হাফেজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি ফর বাংলাদেশ, ডেভেলপমেন্ট অব মহিলা সোসাইটি, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, রূপনগর শিক্ষা স্বাস্থ্য সহায়তা ফাউন্ডেশন, সোশ্যাল ইকুয়ালিটি ফর ইফেক্টিভ ডেভেলপমেন্ট, ইন্টিগ্রেটেড সোসাইটি ফর রেগস অব হোপ, সমন্বিত নারী উন্নয়ন সংস্থা, পল্লী একতা উন্নয়ন সংস্থা, সোসাইটি ফর হিউম্যান ইম্প্রভমেন্ট অ্যান্ড লাস্টিং ডেভেলপমেন্ট, সেঁজোতি হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, এসো জাতি গড়ি, ওয়েসভা, সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড কো অপারেশন অর্গানাইজেশন, ফোরাম ফোর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, প্রকাশ গণকেন্দ্র, রুরাল অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, সার্ভিসেস ফর ইকুইটি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, হিউম্যান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি হিডস, রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি ফর বাংলাদেশ, গ্রাম উন্নয়ন কর্ম, ইকো কনসার্ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কমিশন, গণ-উন্নয়ন কেন্দ্র ও এসো বাঁচতে শিখি (এবাস)।
নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরের জন্য ভোট পর্যবেক্ষণে সংস্থাগুলোকে নিবন্ধন দিয়ে থাকে। এবার নিবন্ধন নিতে আবেদন আহ্বান করার পর ১৯৯টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৬৮টিকে বাছাইয়ে রেখে আপত্তি আহ্বান করল ইসি। আপত্তি শুনানির পর চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন দেওয়া হবে।
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। ইসি সূত্র জানায়, ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি ২১০টি সংস্থার মধ্যে প্রাথমিক যাচাই শেষে ৯৪টি সংস্থার তালিকা নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করে। ইসি যে ৬৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে এর মধ্যে ২৯টি সংস্থা গত জাতীয় নির্বাচনের সময়ও পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত ছিল।
তবে ইসির দেওয়া তালিকায় আলোচিত-সমালোচিত দুটি সংস্থা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এবার পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। এই দুটি সংস্থাও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। গত জাতীয় নির্বাচনে অনভিজ্ঞ কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে নিয়ে এসে সমালোচিত হয়েছিল সার্ক মানবাধিকার ফোরাম।