দৈনিকশিক্ষাডটকম ডেস্ক : আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আওয়ামী লীগ ও তাদের ‘ডামি প্রার্থী’ এবং কিছু কিংস পার্টি ছাড়া এ নির্বাচনে কেউ অংশ নিচ্ছেন না উল্লেখ করে সংগঠনগুলোর নেতারা একে প্রহসন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলছেন, সংবিধানের কথা বলে আওয়ামী লীগ তার ফ্যাসিবাদী শাসনকে আরো দীর্ঘস্থায়ী করতে এ নির্বাচন আয়োজন করছে। যা দেশকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ও সংঘাতের মধ্যে ঠেলে দেবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাম ছাত্র নেতারা।
শুক্রবার গণমাধ্যমকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা এ আহ্বান জানান। এতে স্বাক্ষর করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বাংলদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার তার তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি আগের ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের ‘ডামি প্রার্থী’ এবং কিছু কিংস পার্টি ছাড়া এ নির্বাচনে কেউ অংশ নিচ্ছে না। সংবিধানের কথা বলে আওয়ামী লীগ তার ফ্যাসিবাদী শাসনকে আরো দীর্ঘস্থায়ী করতে এই একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করছে।
এ নির্বাচন দেশকে চরম রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ও সংঘাতের মধ্যে ঠেলে দেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারবিভাগসহ সব সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। হামলা, মামলা, গণগ্রেফতার, গুম, খুনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার বিরোধী দলীয় নেতা- কর্মী ও ভিন্নমতকে দমন করছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের হত্যা, পাহাড়ে বিপুল চাকমাসহ একের পর এক হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে যেকোনো আন্দোলনকে নৃশংসভাবে দমন করতে তারা বদ্ধপরিকর। ভিন্নমত দমনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে চালু করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন।
আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিহীন শাসন ও ব্যাপক দুর্নীতি গোটা অর্থনীতিকে বির্পযস্ত করে তুলেছে উল্লেখ করে নেতারা আরোপ বলেন, রিজার্ভ প্রায় তলানিতে। আকাশ ছোঁয়া জিনিস পত্রের দামের সঙ্গে মানুষ তাল মিলাতে পারছে না। বাড়ছে সম্পদ বৈষম্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয়েছে ছাত্রলীগের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। অগণতান্ত্রিক পন্থায় একের পর এক প্রণীত হচ্ছে ছাত্র স্বার্থ বিরোধী নীতি ও প্রজেক্ট। যা তরান্বিত করছে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ। আর এসব হচ্ছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের ফলে। এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে আরো দীর্ঘস্থায়ী করতেই আগামী ৭ জানুয়ারি একটি একদলীয় নির্বাচন করতে মরিয়া আওয়ামী সরকার। যা চলমান এই সংকটকে আরো জটিল ও সংঘাতময় করে তুলবে।
বিবৃতিতে ছাত্র-সমাজসহ সমগ্র দেশবাসীকে প্রহসনের নির্বাচন বয়কট ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আরো বলা হয়, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার ফলে ভারত, রাশিয়া, আমেরিকা, চীনসহ সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীর আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও স্বার্থ হাসিল বেড়েই চলেছে। জনগণের ওপর নেমে আসছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। একতরফা নির্বাচনে ভোট দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা কেউই এই সরকারের দুঃশাসনকে বৈধতা এবং দীর্ঘায়িত হতে দিতে পারি না।