নিয়মিত কলেজে যেতে না পারা এমরান পেলেন মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি |

ভ্যানচালক মো. ইউছুফের স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে ছয়জনের সংসার। সামান্য আয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। তবু সন্তানদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে পিছু হটেননি। এক ছেলে ও তিন মেয়ের সবাই পড়াশোনা করছে। তবে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এমরান হোসেন। তিনি এ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।  

অভাব-অনটনের মাঝে বেড়ে ওঠা এমরান টাকার অভাবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো কোচিংই করতে পারেননি। বাড়িতে বসেই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাঁর সাফল্যে খুশি শিক্ষক-গ্রামবাসী।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এমরান। প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাঁর এ সাফল্যে গর্বিত তাঁর মা-বাবা ও স্বজনেরা। 

এমরানের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি খুব আগ্রহ তাঁর। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে এসেছে সেরা সাফল্য। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে স্থানীয় হাজিরহাট সরকারি মিল্লাত একাডেমিতে ভর্তি হয় তিনি। সেখানে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পান। এর পর ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে। বাড়ি থেকে জেলা শহরের এ কলেজে যাতায়াতে দিনে প্রায় ১০০ টাকা খরচ বহন সম্ভব ছিল না। তাই তিনি নিয়মিত কলেজে যেতেন না। সুযোগ হয়নি সেভাবে প্রাইভেট পড়ার। তবু সব বাধা পেরিয়ে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান এমরান।

মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য এই প্রথম রাজধানী ঢাকায় যাত্রা তাঁর। গত ৮ মার্চ ঢাকাতে গিয়ে এক আত্মীয়ের কাছে ওঠেন। গত রোববার ঘোষিত ফলে তিনি ৪৭৯তম স্থান অর্জন করেন।

এমরানের বাবা স্থানীয় হাজিরহাট বাজারের একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরির ভ্যানগাড়ি চালান। মো. ইউছুফ বলেন, ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ এমরানের। ঘরে খাবার না থাকায় অনেক সময় না খেয়েই ক্লাস করেছে। ছেলে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাঁরা আনন্দিত। তবে দুশ্চিন্তাও আছে। ছেলের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ও পরবর্তী পড়াশোনার খরচ কীভাবে মেটাবেন, সেটাই এখন বড় ভাবনা।

প্রতিবেশী মো. নুরনবী বলেন, এমরানের বাবা-মা অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁদের কষ্ট আজ সার্থক।

এমরানও গতকাল সোমবার ফোনে বলছিলেন, ‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে দরিদ্রতা যে কাউকে দমিয়ে রাখতে পারে না– সেটা আমি প্রমাণ করতে চাই।’  

মেধাবী এমরানের স্কুলের সব খরচ মওকুফ করা হয়েছিল জানিয়ে হাজিরহাট সরকারি মিল্লাত একাডেমির প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ছেলেটির সাফল্যে তাঁরা গর্বিত।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলম বলেন, এবার কলেজের পাঁচজন শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের একজন এমরান। ছেলেটি খুবই মেধাবী। সে ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারত না। তার পরও সব পরীক্ষায় ভালো ফল করত।

ইউএনও সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, কোনো প্রাইভেট বা কোচিং ছাড়াই এমরান যে কৃতিত্ব দেখিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026118755340576