সেই ডিডি রফিকুলের কাণ্ডনিয়োগ ছাড়াই পাঁচ শিক্ষক এমপিওভুক্ত!

সাবিহা সুমি, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

একই স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ মোট পাঁচ জন শিক্ষকের নিয়োগ জালিয়াতিতে সহযোগিতা করেছেন আঞ্চলিক উপপরিচালকের (ডিডি) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কুমিল্লার জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। চাঁদপুরের মতলব উত্তরের আলী আহম্মদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিল। একই সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন চারজন সহকারি শিক্ষক মাহমুদ হাসান, মো. শাহ আলম সরকার, নাছিমা বেগম ও তপন চন্দ্র সরকার এবং অফিস সহকারি শারমিন আক্তার। দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

স্কুলটি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে এমপিওভুক্ত হয়। তবে ধাপে ধাপে শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত করতে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের মে পর্যন্ত লেগে যায়। এমন নিয়োগে অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদনের জন্য জমা দেওয়া কাগজের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের মূল বিজ্ঞপ্তির স্ক্রিনশট দাখিল করতে হয়। সে অনুযায়ী ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত ‘আলী আহম্মদ জুনিয়র হাইস্কুল-এ’ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি দাখিল করা হয়। কিন্তু দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, ওইদিন দৈনিক ইত্তেফাকে এই স্কুলের কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। ডিডি রফিকুল ইসলাম ও  স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিলের যোগসাজসে এই জালিয়াতি হয়েছে।  

শুধু তাই নয়, চাহিদার তুলনায় কম টাকা দেওয়ায় দপ্তরি জাহান উল্লাহ ও সহকারি গ্রন্থাগারিক হালিমা আক্তারের এমপিওভুক্তি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।  

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জালিয়াতি করে চাকরি বাগিয়ে নেয়া পাঁচজনের পেছনে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে বছরে ব্যয় ১৫ লাখ টাকার মতো। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পান। যেটা প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর নির্ভর করে। এই প্রতিষ্ঠানে আরো দশ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আঞ্চলিক উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলাম গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে আলী আহমদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন কুমিল্লায় জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা (সেসিপের অস্থায়ী নিয়োগ) মোহাম্মদ মনির। তিনি ডিডির ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। তারা সরেজমিনে সবকিছু ঠিক দেখার পর প্রধান শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয় বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের। 

ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিলকে প্রশ্ন করা হলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, সবকিছু যাচাই-বাছাই করে সঠিক পেয়েছেন ডিডি রফিকুল ইসলাম। সেভাবেই আমরা এমপিওভুক্ত হয়েছি।  

এই জালিয়াতির নিয়োগের পক্ষে মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আরো কয়েকজন কর্মকর্তা সাফাই গেয়েছেন বলে জোর অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও আহ্বায়ক যাচাই কমিটির মোহাম্মদুল্লাহ, চরকালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দলিল উদ্দিন ও ছেংগারচর সরকারি মডেল উ্চচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেনজির আহমেদ। তাদের সবার দাবি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবার নিয়োগ সঠিক হয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় চাঁদপুর জেলার ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫টি ও উচ্চমাধ্যমিক ৩টি। সরকার যদি উপযুক্ত কর্মকর্তা দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করে তাহলে আরো অনেক অনিয়মের সন্ধান পাবে। রোধ হবে সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকার অপচয়। 

তারা আরো বলছেন, সুচতুর ডিডি রফিক ও প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম সবাইকে নিয়োগ দেখিয়েছেন ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধ সনদ বাধ্যতামূলক করার অনেক আগে। আর স্কুলটির অভিভাবকদের প্রশ্ন, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে যারা বেসরকারি ননএমপিও প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন তারা কি আদৌ ২২ বছর এমপিওর জন্য অপেক্ষা করেছেন? 

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে সত্যতা মিললে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

 শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030739307403564