নিয়োগপ্রার্থী পরিচয়ে ছাত্রলীগের ‘লং মার্চ টু শিক্ষা ভবন’, সহযোগীতায় আনসার সদস্য

দৈনিক আমাদের বার্তা প্রতিবেদক |

নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশের দাবিতে শিক্ষা ভবনে অবস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ভেতরে স্লোগান ও মানববন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। হঠাৎ করেই আজ মঙ্গলবার বেলা এগারোটার দিকে কয়েকশ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ঢুকে পড়েন অধিদপ্তরে। সরকারি অফিসের ভেতরে মিছিল করার জন্য তাদের কোনো অনুমতি ছিলো না। মিছিলে অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট হয় বলে দৈনিক  আমাদের বার্তাকে জানান কয়েকজন কর্মকর্তা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অফিসিয়াল কাজে আসা সাধারণ দর্শনার্থীরাও বিপাকে পড়েন। তাদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন মিছিলকারীরা। এ সময় দায়িত্বরত আনসার সদস্যরাও মিছিলকারীদের সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুপুর একটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও তারা মিছিল করছিলেন। অধিদপ্তরের কয়েকজনের সঙ্গেও খারাপ আচরণেরও অভিযোগ উঠেছে মিছিলকারীদের বিরুদ্ধে। হুমকিও দিয়েছেন ০১৭১৪৩৩৩৯০# নম্বর থেকে। 

তবে, মিছিলকারীদের মধ্যে নিরপেক্ষ প্রার্থীও কেউ কেউ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া  হাজার হাজার প্রার্থী আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী দীপু মনির লোকদের সাজানো ওইসব লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষার দাবি তুলেছেন গত কয়েকদিনে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, নিয়োগের জন্য অনেকেই লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। যারা ঘুষ লেনদেনে জড়িত তাদের অনেকেই এখনও শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত। আওয়ামী আমলের বিতর্কিত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষার মতোই এসব পরীক্ষাও বাতিলের দাবিতে অনেকেই সোচ্চার হওয়ার খবর পেয়ে ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতারা সম্মিলিতভাবে ফল প্রকাশের দাবি তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।  

এদিকে গত ১৩ নভেম্বর দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।  

প্রতিবেদনটি হুবহু এমন : 

‘প্রদর্শক নিয়োগে টাকার খেলা’ শিরোনামে দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর। প্রকাশিত প্রতিবেদন ও অন্যান্য লিখিত  অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই বছরের ২ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীরকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তদন্ত স্থগিত করতে বলা হয়। নিয়োগের এমন প্রকাশ্য বাণিজ্য হত্যাসহ একাধিক মামলায় গ্রেফতার ও জেলখানায় থাকা দীপু মনির শিক্ষামন্ত্রীত্বের কালের। 

ওই নিয়োগে ঘুষলেনদেনের অভিযোগ তদন্তই শুধু হিমাগারে যায়নি, সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রদর্শক নিয়োগের সব প্রক্রিয়া যথারীতি চলেছে সেই থেকে। ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সুপারিশে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়োগের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাজানো মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে জুন মাসে। এখন  চূড়ান্ত ফল প্রকাশ ও যোগদানটাই শুধু বাকী। ৫ আগস্টের পরে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শিক্ষাখাতের প্রায় সবার দাবি সরকারি চাকরিতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে বিজ্ঞাপন প্রকাশ ও পরীক্ষা নেওয়া হোক।

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, চূড়ান্ত ফল প্রকাশের অনুমতি চেয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি লেখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। ওই চিঠি শিক্ষা থেকে জন প্রশাসনে গেছে ১২ সেপ্টেম্বর। সেখান থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে পাঠানো হয় অক্টোবরে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, চার বছর আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু পরপরই অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন খতিয়ে দেখা দরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তের নিদের্শ কেন বন্ধ হয়েছিলো তাও খতিয়ে দেখা দরকার।     

 

জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সরকারি কলেজের জন্য দশটি বিষয়ে মোট ৬১০ জন প্রদর্শক ও সমমানের পদে নিয়োগে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ আগস্ট নামকাওয়াস্তে ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হয়। নিয়োগ কমিটির কেউ কেউ লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে থাকলেও তা হয়নি। টাকার বিনিময়ে এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে সরকারি কলেজগুলোতে নিয়োগ দিতে যাওয়া এই প্রদর্শকরাই পরবর্তীতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত হবেন। পদোন্নতি পেয়ে তারা অধ্যাপকও হতে পারবেন। শিক্ষা ক্যাডারের সৎ কর্মকর্তারা কথিত ওই এমসিকিউ পরীক্ষা বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধীনে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলেছিলেন সেই সময়েই। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, দশম থেকে দ্বাদশ গ্রেড পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণির পদ। মাউশির নিয়োগবিধিতে এই পদগুলোকে তৃতীয় শ্রেণির দেখিয়ে শুধু এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হয়। 

জানা যায়, দশম গ্রেডে ৫১৪ জন প্রদর্শক ও একই গ্রেডে ২১ জন গবেষণা সহকারি, ৬৯ জন সহকারি গ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যটাগলার ও ছয় জন ল্যাব সহকারীসহ মোট ৬১০ জনের নিয়োগ। পাঁচ সদস্যের নিয়োগ কমিটির সভাপতি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার তৎকালীন পরিচালক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক বিতর্কিত মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী। অধিদপ্তরের তৎকালীন সাধারণ প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস সদস্য-সচিব এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা এর সদস্য ছিলেন। ৫ আগস্টের পর সবাইকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়।  

নাম প্রকাশে অনিচছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, জেলে থাকা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও তার ভাই টিপু, চাঁদপুর পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারসহ নিয়োগ বাণিজ্যে অভিযুক্ত মাউশি অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের বাছাইকৃত ছাত্রলীগ প্রার্থীদের এমন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে দেওয়াটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা ও নিয়োগ দেওয়া ‍উচিত।  

সরকারি কলেজের কর্মচারী সমিতির নেতা হাবিবুর রহমান বলেন, লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শত শত নেতাকে সরকারি কলেজের গুরুত্বপূর্ন পদে চাকরির সুযোগ দিয়ে কলেজগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের জোর দাবি জানাই। নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর - dainik shiksha আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর তিতুমীর কলেজের ইস্যুটি আশু সমাধান হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব - dainik shiksha তিতুমীর কলেজের ইস্যুটি আশু সমাধান হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি - dainik shiksha মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি ফেসবুক পোস্টের জেরে শিক্ষককে মার*ধরের অভিযোগ - dainik shiksha ফেসবুক পোস্টের জেরে শিক্ষককে মার*ধরের অভিযোগ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান নেয়ায় তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান নেয়ায় তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024101734161377