নীলফামারীতে লকডাউন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে লকডাউন করা হয়েছে। একজন চিকিৎসকের শরীরে করোনা পজিটিভ হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টার পর ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি লকডাউন করা হয়। অন্যদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাড়া-মহল্লা নিজেরাই বন্ধ করে দিচ্ছে এলাকাবাসী। বুধবার (৮ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত রবিবার নীলফামারী জেলায় করোনা সন্দেহে সাতজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই সাতজনের মধ্যে একজন চিকিৎসকের পজিটিভ প্রতিবেদন গতকাল নীলফামারী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে আসে।

ওই চিকিৎসক কর্মস্থল থেকে গত ২৫ মার্চ ঢাকায় যান। সেখান থেকে ফিরে চলতি মাসের ৩ তারিখে কর্মস্থলে যোগ দেন। এরপর জ্বর-সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলে গত ৫ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন রনজিৎ কুমার বর্মন বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি লকডাউন করা হয়েছে। ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাঁরা আছেন, তাঁদের কোয়ারেন্টিন করা হবে।

গাজীপুর মহানগরে ঢোকার ও বেরোনোর  ১০ সড়ক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় লকডাউন শুরু হয়েছে ময়মনসিংহ জেলাজুড়ে।

পাড়া-মহল্লা নিজেরাই বন্ধ করে দিচ্ছে এলাকাবাসী : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েও সরকার মানুষের চলাচল বন্ধ করতে পারছে না। ফলে প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় সচেতন এলাকাবাসী নিজেরাই নিজেদের পাড়া-মহল্লা বন্ধ করে দিচ্ছে। খুব বেশি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে এলাকা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। বাইরের কাউকে এলাকায় ঢুকতেও দিচ্ছে না।

গত সোমবার থেকে সারা দেশে দুপুর ২টার পর ওষুধের দোকান ছাড়া সব মুদি দোকান ও কাঁচাবাজার বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুপারশপগুলো সন্ধ্যা পর্যন্ত

খোলা থাকবে। এতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে কাঁচাবাজার ও অলিগলিতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। মূলত দুপুর ২টার পর থেকে মানুষের চলাচল বন্ধ হচ্ছে। গতকাল রাজধানীতে দেখা যায়, সরকারের নির্দেশমতো রাজধানীর বাজার ও অলিগলির দোকানপাট দুপুর ২টার পর বন্ধ করা হয়েছে। প্রধান সড়কে আগের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা কমেছে। টহল বেড়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর। প্রশাসন গলির মোড়ের সবজি, ফল ও অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ দোকানও সরিয়ে দিয়েছে।

গতকাল দুপুরে মানিকনগর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকান বন্ধের তোড়জোড় চলছে। ক্রেতার ভিড় থাকায় দোকানি দ্রুত পণ্য দিয়ে বিদায় করছেন। অনেক সবজির দোকান বন্ধ হয়ে গেছে আগেই। কিছু খোলা থাকলেও তা বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। ২টার পর মুগদাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট বন্ধ। ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকানগুলো পুলিশের ভয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে জরুরি সার্ভিসের আওতাভুক্ত গাড়ি ছাড়া কোনো ধরনের যানবাহন চলছে না। খুব অল্পসংখ্যক প্রাইভেট কার চলাচল করতে দেখা গেলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাচ্ছে, এগুলোয় চিকিৎসক, ব্যাংকার কিংবা যেসব কারখানা এখনো অনুমোদিতভাবে উৎপাদনে আছে সেগুলোর কর্মকর্তারা যাতায়াত করছেন। এর বাইরে গণপরিবহন বলতে গেলে শূন্য হয়ে গেছে। অল্প কিছু রিকশা আছে সড়কে।

গতকাল বিকেলে নগরী ঘুরে কোথাও গণপরিবহন, অটোরিকশা, সিএনজি কিংবা অন্য গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনা সদস্য ও পুলিশ সদস্যদের টহল টিমের গাড়িগুলো চলাচল করছে। গাড়ির বহর থেকে নগরবাসীকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে।

পঞ্চগড় জেলা শহরের বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় নিজেদের এলাকা নিজেরাই বন্ধ ঘোষণা করেছে। এমনকি মানুষজনের প্রবেশ ঠেকাতে প্রতি রাস্তার প্রবেশস্থলে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছে তারা। এদিকে জেলা প্রশাসন দুপুর ১টার পর হাট-বাজারে ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা এবং পথেঘাটে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এমনিতে শহরে মানুষের চলাচল কমে গেছে।

জেলা শহরের রাজনগর, বানিয়াপট্টি, তুলারডাঙ্গা, কামাতপাড়া, জালাসী, ডোকরোপাড়া, রওশনাবাগ, ইসলামবাগসহ প্রতিটি এলাকার প্রবেশপথে স্থানীয়রা নিজেরাই বাঁশ বেঁধে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বাঁশের পাশাপাশি গাড়ির টায়ার, টিন ও গাছের গুঁড়িও ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পানি রেখেছে। পঞ্চগড় রওশনাবাগ এলাকার আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এলাকার মানুষরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকার প্রবেশপথে এই ব্যারিকেড দিয়েছি। ব্যারিকেড দেয়ার পর থেকে মানুষজনের চলাচল অনেকটা কমে এসেছে।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এখন আর ছাড় নয়, নির্দেশনা অমান্য করলে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হব।

শেরপুরে রাস্তায় বাঁশ বেঁধে সৃষ্টি করা হয়েছে ব্যারিকেড। সেই বাঁশে ‘গ্রামটা আমাদের, তাই দায়িত্বটাও আমাদের‘—এমন স্লোগান লেখা কাগজ ঝুলানো হয়েছে। গ্রামের প্রবেশপথগুলোতে কড়া নজরদারি করতে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। সেখানে দায়িত্ব পালন করছে এলাকার তিন-চারজন করে যুবক। যারা গ্রামে ঢুকছে নেওয়া হচ্ছে তাদের পরিচয়, জানতে চাওয়া হচ্ছে প্রবেশের কারণ। আগতদের জীবাণুমুক্ত করতে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গতকাল এমন চিত্র দেখা গেছে শেরপুর সদরের লছমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে।

ওই গ্রামের কলেজপড়ুয়া যুবক মোকাদ্দেস হোসেন জানান, ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে নিজেদের সুরক্ষার জন্য এই দায়িত্ব পালন করছে গ্রামবাসী। করোনার প্রকোপ না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।

সাতক্ষীরায় অকারণে বাইরে ঘোরাফেরা করা ও মোটরসাইকেল নিয়ে বেরোনোয় শ্যামনগরে চারজনকে এক হাজার টাকা, কালীগঞ্জে দুজনকে দেড় হাজার টাকা, আশাশুনীতে ৯ জনকে সাড়ে সাত হাজার টাকা ও অবৈধভাবে ইট পোড়ানোর জন্য বড়দল ইউনিয়নে মইনুল সরদারকে পাঁচ হাজার টাকা, তালায় সাতজনকে তিন হাজার ৮০০ টাকা ও কলারোয়ায় ৯ জনকে তিন হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বরিশাল জেলায় বাইরে থেকে মানুষ ও যানবাহন প্রবেশ এবং বরিশাল থেকেও বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবত থাকবে বলে জানানো হয়। 

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার পাড়ায় পাড়ায় স্ব-উদ্যোগে চলছে লকডাউন। উপজেলার পুরান তোপখানা, দত্তপাড়া, নাগেরখানা, চতুরঙ্গ, রায়েরপাড়া, নন্দীপাড়া, মজলিসপুর, সাগরদীঘির উত্তর পার, ঈনাথখালী, খন্দকার মহল্লা, দক্ষিণ নন্দীপাড়া, দাসপাড়া, শেখের মহল্লা, পুরানবাগ, পূর্বগড়সহ ২০টির মতো গ্রাম স্ব-উদ্যোগে লকডাউন করা হয়েছে। প্রত্যেক পাড়ার প্রবেশমুখে বাঁশের খুঁটি পুঁতে লোকজন ও যানবাহনের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকার বলেন, জনগণ যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরা নিশ্চিত করতে পারে তাহলে তাদের সাধুবাদ জানাই।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন থেকে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের যানবাহন জেলার বাইরে যাবে না, আবার ঢুকতেও পারবে না। আর সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মুদি দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা রাখা যাবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006598949432373