আওয়ামী লীগের আমলে মানুষের চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার পূরণও করতে পারবে তার সরকার। দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা বলবো, এদেশের মানুষ একটা সময় নুন ভাত জোটাতেই কষ্ট হতো। তারপর এলো ডাল ভাত। অন্তত মানুষকে আমরা এমন অবস্থায় আনতে পেরেছি, এখন কিন্তু নুন ভাত, ডাল ভাত না মাংস পাচ্ছে না সেটাই কথা আসছে।
‘অন্তত এই নুন ভাত, ডাল ভাত থেকে মানুষের চাহিদা মাংস ভাতে তো উঠে এসেছে। হ্যা, আমি জানি, মাংসের দাম অনেক বেড়েছে এটা ঠিক। মানুষ মাংস ভাত খাওয়ার যে সামর্থ পেয়েছিলো এটুকু তো স্বীকার করতে হবে। চাহিদাটা তো বাড়ছে। চাহিদা তো বাড়াতে পেড়েছি। বাড়াতে যখন পেড়েছি, পুরণও করতে পারব এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে আমরা প্রবৃদ্ধি আটভাগে তুলতে পেরেছিলাম। এরপর কোভিডের কারনে এলো মন্দা। এর প্রভাবে আমাদের উপরও এসে পড়ে। সেখান থেকে যখন আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি আসলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যংশন কাউন্টার স্যাংশন।
‘শুধু আমাদের দেশ না, সারা বিশ্বেই আজ মুদ্রাস্ফিতি, সারাবিশ্বেই মন্দা। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি। প্রতিটি জিনিসের মূল্য এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা কিন্তু আমাদের দেশের কারণে না, আন্তর্জাতিক কারনেই মূল্য বৃদ্ধি যার আঘাত আমাদের উপরও এসে লাগছে।’
‘আমার আন্দোলনকারীরা গেলো কোথায়?’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও তুলে ধরেন। পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধীতাকারীদের সমালোচনাও করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপি জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, কয়লার দাম বৃদ্ধি, শুধু বৃদ্ধিই না পাওয়াই কঠিন। এজন্য আমাদের কয়েকটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল-পায়রা বন্ধ ছিলো। যদিও দক্ষিণে তেমন বেশি অসুবিধা হয়নি। এজন্য কিছুটা লোডশেডিং করতে হয়। সে সময় একটা প্রশ্ন আমার মনে জাগে, আমরা যখন রামপাল করতে গেলাম আপনাদের মনে আছে পরিবেশবাদীরা খুব আন্দোলন করলো। লংমার্চ করলো।
‘আমি তখন আমার প্রতিমন্ত্রীকে বললাম, আমাদের লক্ষ্য ছিলো দেশের মানুষকে শতভাগ বিদ্যুৎ দেবো। শতভাগ দিয়েছি। এখন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ তারা এখন আনন্দ মিছিল করে না কেন। তখন কিন্তু আবার বিদ্যুতের জন্য কাঁদছে। তারা জানে, আনন্দ মিছিল করতে গেছে মানুষ পিটিয়ে চ্যাপ্টা করে দেবে। আমি এখনও বলি, আমার আন্দোলনকারীরা গেলো কোথায়? যাক, এখন আমাদের কয়লা আবার আসা শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের অসুবিধাটা আর থাকবে না।’
‘মানুষের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকবো, সে বাপের মেয়ে আমি না’
এ সময় ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কেন, সেটাও আপনারা জানেন। আমার উপর প্রচন্ড চাপ ছিলো গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি বলেছিলাম এই গ্যাস জনগণের। আর কতটুকু আছে জানি না।
‘কাজেই আমার পক্ষে বাংলাদেশের সম্পদ, মানুষের সম্পদ শুধু ক্ষমতার লোভে তা বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকবো, সে বাপের মেয়ে আমি না। আমরা চাই নি, কিন্তু মুচলেকা দিয়েছিলো খালেদা জিয়া। একই জায়গায় বসে সে ঘটনা। অনেকবার বলেছি, সময় নষ্ট করতে চাই না। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিলো, গ্যাস দেবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সেই ২০০১ এর নির্বাচনের পর অত্যাচার নির্যাতনের কথা অন্তত আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভুলে যাওয়ার কথা না। কারও হাত কেটেছে, পা কেটেছে, চোখ তুলেছে। আমাদের মেয়েদের উপরে যেভাবে অত্যাচার করেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো রেপ করেছে, নির্যাতন করেছে।
‘পাশবিক অত্যাচার করেছে। বাড়িঘর দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটেছে। ছুটে গেছি মানুষের কাছে। তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। শতবাঁধা অতিক্রম করে গিয়েছি। তারপর তো গ্রেনেড হামলা, বোমা ইত্যাদি অনেক কিছু্ই তো আমাদের শুনতে হয়েছে। এমনও শুনতে হয়েছে আওয়ামী লীগ একশ বছরও ক্ষমসতায় আসবে না।’
সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, বাংলা ভাই সৃষ্টি করে আর দূর্নীতি করে অর্থ সম্পদ বানিয়ে ওই বিএনপি, সন্ত্রাসী দল ভেবেছিলো ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবে। কিন্তু বাংলার মানুষকে তারা চেনে নাই। জনগণের সম্পদ বেঁচবে আর লুটপাট করে জনগনের সম্পদ কেড়ে নিয়ে নিজেরা সম্পদের মালিক হবে। আর সেই টাকার জোরে ক্ষমতায় থাকবে এটা এদেশের মানুষ মেনে নেয় নি।
‘৯৬ সালে ভোট চুরির জন্য জনগণ খালেদা জিয়াকে বিতারিত করেছে ক্ষমতা থেকে। আর ২০০৬ সালে নির্বচন দিয়ে ২০০৭-এ নির্বচন করতে গিয়েছিলো সেটাও বাতিল হয়েছিলো। এসেছিল ইমার্জেন্সি। তার বিরুদ্ধেও এদেশের মানুষই প্রতিবাদ করে। ২০০৮ এ আওয়ামী লীগ আসে। আমরা আসার পরে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করি।’
‘নিজেরাই খাদ্য উৎপাদন করবো’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সময়ের আর্থ সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নের পার্থক্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিএনপির আমল থেকে আওয়ামী লীগের সময়ে বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুন। পাশাপাশি দুই আমলের রিজার্ভের পার্থক্যও তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ৩০ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। এটা হিসাব করা হয়, এ জন্য যে, যদি কোনো আপদকালীন সময়ে খাদ্যাভাব দেখা দেয় অন্তত তিন মাসের খাবার যেন বিদেশ থেকে কেনা যায়। এজন্যই রিজার্ভের হিসাব রাখে।
‘এখন তিন মাস না ৫ মাসের খাবার আমরা কিনতে পারবো। তবে আমি ইতিমধ্যে সবাইকে আহ্বান করেছি খাবার বাহিরে থেকে আর কেনা লাগবে না। আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব, নিজেদের চাহিদা মেটাবো, প্রয়োজনে আমরা বিদেশেও পাঠাবো। তবে কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। কিছু লোক মজুদ করে। পেঁয়াজ দেখেছেন, যেই দাম বাড়লো, আমদানি করলাম যার যা বোঝা ছিলো বের হয়ে গেলো, দাম কমে গেল। এই স্বভাবটা বদলাতে হবে।’