দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ তুলে নেতাদের একের পর এক পদত্যাগের মধ্যেই এবার ডাকসুর সাবেক ভিপি নূর ও তার কেন্দ্রীয় নেতাদের বেইমান, বাটপার ও চোর হিসেবে আখ্যা দিলেন সহকর্মীরাই। সংগঠনে নূরের অত্যন্ত কাছের সহকর্মী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুনতাসীরের একটি ভয়েস রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যা নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বেইমান, বাটপার ও চোর বলে গালাগালি করেছেন ক্ষুব্ধ নেতা মুনতাসীর মাহমুদ। ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক জসিম উদ্দিনকে দেয়া একটি ভয়েস রেকর্ডে তিনি বলেন, ‘জসিম ভাই, মেজাজটা একবারে খারাপ করাইবেন না। আপনাদের আহ্বায়ক গ্রুপ (মেসেঞ্জার গ্রুপ) থেকে বেয়াদব সোহরাব কেন্দ্রের নাম দিয়ে আমারে রিমুভ করছে, কয়দিন হইছে, কালকে সবাই প্রতিবাদ করছে, সব জেলা কমিটির সবাই প্রতিবাদ করছে। এখন পর্যন্ত এ্যাড করাইছেন? কি জন্য করেন নাই? কোন কথা বলতে পারছেন? আমি কি ভিপি নূররে যাইয়া বলুম যে ভাই আমারে এ্যাড কর, আমারে এ্যাড কর। আমরা কি ফকির? কেন্দ্রের কেন সমালোচনা করা যাবে না?’
ভয়েস রেকর্ডে তিনি আরও বলেন, ‘এই তারেক ভাই কি করছে ? পুরা সংগঠনকে কালার (কলঙ্কিত) করছে। প্রবাসী অধিকার পরিষদ, (গালি) পরিষদ করেন মিয়া(রাগান্বিত স্বরে)। কে বলছে আপনারে এগুলো করতে? অবশ্যই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মতামত নিয়ে করতে হবে। কেন্দ্র কোন কাজটা সবার মতামত নিয়ে করছে ? সংগঠন করেন, (গালি) সংগঠন করেন মিয়া। মেজাজ খারাপ করেন। সবগুলোরে আজকের মধ্যে রিমুভ দিবেন আইজকা (প্রচ- রেগে), নাইলে কোন সংগঠন থাকব না। মিয়া ফাজলামি করেন। আপনার সঙ্গে তো কোন, আপনারে আমি একা বলতেছি না। আপনার সঙ্গে আমার রাগ নাই। কিন্তু কেন্দ্রের এগুলো (গালি), চোর, বাটপার। অন্যায় সহ্য করা আর করা একই অপরাধ।’
উল্লেখ্য, সংগঠনটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও প্রিয় মুখ এপিএম সুহেল গত মাসের ১৫ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আর্থিক অস্বচ্ছতা, সাংগঠনিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে নূর-রাশেদদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করে মূল সংগঠনের নামে আলাদা ২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। সংগঠনটির সদস্য সচিব হয়েছিলেন ঢাকা কলেজ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ইসমাইল সম্রাটকে।
কেন্দ্রীয় কমিটির অপর দুই যুগ্ম-আহ্বায়ক ও পরিচিত মুখ মুহাম্মদ উল্লাহ মধু ও মুজাম্মেল মিয়াজীকে উপদেষ্টা ঘোষণা করা হয়। খুলনা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক মোঃ আমিনুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক জালাল আহমেদ, সিলেট বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক আব্দুর রহিম, সুনামগঞ্জ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল হক রুবেলকে যুগ্ম-আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়।
এর কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটির ঘোষণা দেন নূরের সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান। কমিটি দেয়ার দুই দিনের মাথায় ৪৫ জনের মধ্যে ৩৪ জনই পদত্যাগ করেন সংগঠনের অন্যায় ও অনিয়মের প্রতিবাদে।
পদত্যাগের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ছয়দিনের মাথায় সেই কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরইমধ্যে নূরের বিশ্বস্ত সহকর্মী মুনতাসীর মাহমুদের ভয়েস রেকর্ড ফাঁস হলে, তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরকে নিয়ে।