নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক

মমিনুল ইসলাম বাবু, আমাদের বার্তা |

সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ দেখিয়ে ভুয়া নিয়োগে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক নারী। দীর্ঘ নয় বছর পরে তিনি জানতে পারলেন তার পদে আগেই একজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এখন ওই নারীকে প্রধান শিক্ষক বলছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নতুন করে নিয়োগ নিতে। এমন ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। 

ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম শামীমা আক্তার সরদার। তিনি উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের শামসপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাকে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে তাকে ভুয়া নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান।

শামীমা আক্তার সরদার। ছবি : দৈনিক শিক্ষাডটকম

শামীমা আক্তার সরদারের অভিযোগ, শূন্য পদ দেখিয়ে তাকে সমাজ বিজ্ঞান পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও এখন তাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নতুন নিয়োগ নিতে বলছেন প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী এই শিক্ষক।

এ ঘটনায় শামীমা আক্তার সরদার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও মিনহাজুল ইসলাম।

জানা যায়, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৪ আগস্ট স্থানীয় দৈনিক কুড়িগ্রাম খবর ও দৈনিক খবরপত্র পত্রিকায় শূন্য পদ দেখিয়ে সহকারী শিক্ষক পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে আবেদনকৃতদের ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর একটি বোর্ড বসিয়ে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। সে সময় নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মরহুম সাদেক হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান ও বোর্ডের মনোনীত প্রতিনিধি। 

শামীমা আক্তার সরদার লিখিত অভিযোগে বলেন, সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে যোগদান পেতে তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয়া হয়। সে সময়ে ৩ মাসের মধ্যে নিজ দায়িত্বে এমপিওভুক্ত করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও তাকে এমপিওভুক্ত করাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। কেননা সমাজ বিজ্ঞান পদটি শূন্য দেখানো হলেও পদটি শূন্য ছিলো না। ওই পদে সালমা আক্তার বানু নামে একজন চাকরিরত রয়েছেন। পরে তাকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে নতুন নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করেন প্রধান শিক্ষক।  

তিনি অভিযোগে আরো বলেন, দীর্ঘ ৯ বছর প্রতারিত হয়ে এমপিওভুক্তির আবেদনের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তাহের আলীর কাছে গেলে তিনি ফাইলে স্বাক্ষর করতে ৫ হাজার টাকা উৎকোচ নেন। অনেক কষ্টে ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে ফাইলে স্বাক্ষর করিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে অনলাইনে বিল পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। আবেদনটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালকের দপ্তর থেকে পরিত্যক্ত হয়। পরে জানতে পারেন (সহকারী শিক্ষক-সমাজ বিজ্ঞান) এমপিওভুক্ত শিক্ষক থাকায় আমি ওই পদের জন্য অতিরিক্ত শিক্ষক। ফলে আমার বেতন বিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার বানু বলেন, আমি ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ সমাজ বিজ্ঞান পদে যোগদান করে এখনো এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছি। 

নিয়োগের বিষয়ে চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাদুর রহমানে বলেন, ওই মহিলার নিয়োগটি বিধি মোতাবেক হয়েছে। স্কুলে আসেন এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হবে। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তাহের আলী টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, স্কুলটি নিম্ন মাধ্যমিক ছিলো এখন মাধ্যমিক হয়েছে। ওই শিক্ষিকার বিল হওয়ার কথা, তাই এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছিলো। 

উপজেলা নিবাহী কমকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032339096069336